সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রাথী

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য মজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় নিজের ও কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম। তিনি আগামী ২৯ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছেন। 

সোমবার (২৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন তিনি। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক। তিনি মজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন সম্পর্কে বলেন, উনি একজন মানসিক ভারসাম্যহীন লোক। তার কোনো কথায় গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদুল ইসলাম বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন থেকেই নিক্সন চৌধুরী আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি শুরুতে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন, পরে সরে না দাঁড়ানোয় আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় গত ২১ মে সকাল ১০টার দিকে নিক্সন চৌধুরী আমার বাড়িতে এসে আমাকে তুলে নিয়ে যান। এরপর ভাঙ্গায় তার বাড়িতে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি এমন কথা ফেসবুকে বলতে বাধ্য করেন। পরে জনগণের অনুরোধে আমি নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, গত ২৫ মে রাতে  নিক্সন চৌধুরী আমার বাড়িতে সদরপুরের নেতাকর্মী ও তার সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করেন। ওই সভায় নিক্সন চৌধুরী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। উপজেলার ৬৮ কেন্দ্রে আমার কোনো এজেন্ট দিতে দেবেন না বলে হুমকি দেন।

শহীদুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে যদি আমি হেরে যাই তাহলে আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু আমার ওপর এখন এতো চাপ, প্রাণনাশের হুমকি। আমি এখন টিকে থাকতে পারছি না। এমপির হুমকির পর আমার ৬৮টি কেন্দ্রের নেতাকর্মীদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়ত তাদের টেলিফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের সেন্টারে ঢুকতে দেবে না, এজেন্ট হতে দেবে না, প্রকাশ্যে ভোট সিল দিয়ে নিয়ে নেবে। এসব কথা বলে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। এখন আমার জীবন নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। আমি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারব কিনা জানি না। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক। এ সময় অন্যদের মধ্যে সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু আলম রেজা, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. ফরহাদ মিয়া, সদস্য কাজী কুদ্দুসুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন, সদরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ইয়াকুব আলী মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদুলের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে নিক্সন চৌধুরী বলেন, শহীদুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। গত নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে হেরেছেন। তিনি উপজেলায় প্রতিটি কেন্দ্রে এজেন্ট দেবেন কীভাবে। নির্বাচনে পরাজিত হবেন জেনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলছেন।

‘তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এ বক্তব্য সম্পর্কে নিক্সন চৌধুরী বলেন, আমি মানসিক ভারসাম্যহীন হলে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলাম কীভাবে। উনি (ইশতিয়াক) সন্ধ্যার পরে কোথায় থাকেন কি করেন তা সকলে জানে। একজন নেশাগ্রস্ত লোকের পক্ষেই এসব কথা বলা সম্ভব।

এর আগে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য মজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের কণ্ঠ সদৃশ একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুলকে উদ্দেশ করে সংসদ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এমপিগিরি করি আর না করি, বাবুলের অস্তিত্ব আমি সদরপুর থেকে বিদায় করব।’ এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক ওরফে আরিফ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে শোনা যায়। যদিও সেই অডিও এডিট করা বলে জানান নিক্সন চৌধুরী।

উল্লেখ্য, আগামী ২৯ মে তৃতীয় দফায় সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ  নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান (মোটরসাইকেল) ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম (আনারস)। এ নির্বাচনে কাজী শফিকুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী।

জহির হোসেন/এএএ