ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রার ৫৫ পয়েন্টে বাঁধে ভাঙন ও বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ভেঙে গেছে ঘর-বাড়ি, ভেসে গেছে ফসলের মাঠ ও মাছের ঘের-পুকুর।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে নগরীর রয়েল মোড়, লবণচরা, টুটপাড়া, মহিরবাড়ি খাল পাড়, শিপইয়ার্ড সড়ক, রূপসা, চানমারী বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।  

খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল তাণ্ডবে খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনার ৫৫টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ও উপচে প্লাবিত হয়েছে অসংখ্য গ্রাম। এরমধ্যে ৩২টি পয়েন্টে ১ দশমিক ৭০৫ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। আর ২৩টি পয়েন্টের ৩ দশমিক ৬৮৮ কিলোমিটার বাঁধ ওভারফ্লো হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। ১২ হাজার ৭১৫ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ধান, পাট, তরমুজ ও সবজি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। 

এছাড়াও ৭ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমির ৫ হাজার ৫৭৫টি মাছের ঘের এবং ৩০৭ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৩০০টি পুকুরের মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

জানা গেছে, রোববার দিবাগত রাতে জোয়ারের চাপে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বেলাল গাজীর বাড়ির সামনের বাঁধ ভেঙে গেছে। এছাড়া বাঁধের নিচু কয়েকটি জায়গা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব জায়গায় এলাকার মানুষ রাতভর মেরামত কাজ চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। এতে ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে কয়েকশ কাঁচা ঘর-বাড়ি ও দোকানপাট।

কয়রা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম তারিক উজ জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ও তুলনামূলক নিচু স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কাজ করছেন। আমি নিজেও সেখানে যাচ্ছি। জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন ঝড়ো বাতাস বইছে।

দাকোপ উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তলিয়ে গেছে। উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগী ফকিরকোনা, ঝুলন্তপাড়া এবং পন্ডিতচন্দ্র স্কুল সংলগ্ন এলাকা সম্পূর্ণ প্লাবিত। এ অবস্থায় চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এছাড়া পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী, দেলুটি, সোলাদানা, লস্কর, লতা ও কপিলমুনি ইউনিয়নের দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে লোকালয়। 

তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্ষিতীশ গোলদার বলেন, একই এলাকায় পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে এখন পানি ঢুকছে। কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটা লোনা পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে। এলাকাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতাভুক্ত।

তিনি আরও বলেন, এতো উঁচু জোয়ার আগে দেখিনি। ঢাকি ও শিবসা নদীর মোহনায় কামিনীবাসিয়া পুরাতন পুলিশ ক্যাম্প-সংলগ্ন ওই এলাকায় বেড়িবাঁধের অংশ খুব বেশি দুর্বল ছিল না। তবে বেশ কিছুটা নিচু হওয়ায় উচ্চ জোয়ারের চাপে পানি বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে ভেতরে ঢোকে। এরপর বেড়িবাঁধের পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে যায়।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, জোয়ারের পানিতে দাকোপের বেশকিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। আমার ইউএনও বাংলোর সামনের পুকুর তলিয়ে গেছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। 

মোহাম্মদ মিলন/এমএএস