দেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ঝড়ের প্রভাবে নদ-নদীতে বেড়েছে পানি। বইছে ঝড়ো বাতাস। ফলে খুলনার উপকূলীয় এলাকার মানুষ অবস্থান নিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।

রোববার (২৬ মে) রাতে কথা হয় বটিয়াঘাটা উপজেলার বেসরকারি এনজিও সিএসএসের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া জলমা এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে।

এ সময় ভ্যানচালক খোকন মল্লিক বলেন, ‘আমাগে ভাঙন কূলে বাড়ি, আমাগে দুরবস্থা। ঘর-দুয়ার ভালো নেই। ঝড়ে যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। রাস্তার গায়ে গায়ে জল এসে গেছে। এই রাতের মধ্যে কী হবে আল্লাহ জানে।’

তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে আমার পরিবার এবং অন্যান্য পরিবারও আইছে। আমার মেয়ে, স্ত্রী আইছে। সবাই আইছে, বাড়ির ওইধারে কেউ নেই। পরিবেশ খুব ভালো না। ঝড় আসলে ভয় করে নদীর কূলে বাড়ি। পানি কমতেছে না, রাস্তা ভেঙে যে কোনো সময় পানি আসতে পারে। ভয়তে আমরা ওখানে থাকতি পারলাম না। সেই ভয়তে আমরা সাইক্লোন সেল্টারে আইছি।’

একই এলাকার রেবেকা বেগম বলেন, ‘ঝড়ের ভয়তে চলে আইছি। নদীর পাড়ে ঘর, ভেঙে যাবার ভয়। বাড়ির উপরেও পানি চলে আসছে। সেখানে কি থাকা যায়? সেই কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আইছি আমরা। পরিবারসহ সব চলে আইছি। মেয়ে, জামাই, ছেলে, স্বামী ও আমি আইছি।’

খলিল মিয়া বলেন, ‘জোয়ারের সময় বাড়ির উপর দিয়ে পানি যাচ্ছে। ঘর দরজা ভালো না। ঘর-বাড়ি ভেঙে গেলে বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় থাকব, তাই আশ্রয়কেন্দ্রে আসছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা দেবলা বলেন, ‘আমাদের ঘর-দুয়ার ভালো না। ঝড় হলে বাতাসে ভয় করে তাই বাচ্চাদের নিয়ে এখানে এসেছি।’

ঝড়ের কবল থেকে বাচঁতে পরিবারের সঙ্গে এসেছেন মুহিন শেখ নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘ঝড়ের ভয়ে এখানে এসেছি। এখানে এসে পড়াশোনা করছি।’

আশ্রয়কেন্দ্রে দায়িত্বরত সাব এ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার অনূপ কুমার পাল বলেন, এখানে ২০০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। জলমা এলাকার শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। রাত যত গভীর হচ্ছে মানুষ ততোই আসছে। আগতদের জন্য শুকনো খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরাও খোঁজ নিচ্ছেন।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা আবদুল করিম জানান, রোববার বিকেল থেকে খুলনার উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের শুকনো খাবারসহ আপদকালীন সাহায্য করা হয়েছে। কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় প্রতিটিতে দেড় লাখ নগদ টাকা এবং ১০ টন চাল পাঠানো হয়েছে। বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, রাতেই ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূল অতিক্রম করবে। এ সময় বাতাসের গতি থাকবে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে ৮ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। রাতে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে।

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সতর্ক থাকার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার, ওষুধ, ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রস্তত রাখা হয়েছে। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড।

খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া তিনটি মুজিব কেল্লায় ৪৩০ জন মানুষ ও ৫৬০টি গবাদিপশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছ। উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে।

মোহাম্মদ মিলন/এমজে