ঘূর্ণিঝড় রেমাল
কালো মেঘ জমেছে বাগেরহাটের আকাশে, ১০ নম্বর বিপদ সংকেত
সমুদ্রে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এরই মধ্যে রেমালের প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বাগেরহাটের আকাশে। রোববার (২৬ মে) সকাল থেকেই বাগেরহাটে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে। এছাড়া মোংলা বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালকে কেন্দ্র করে গতকাল সন্ধ্যা থেকে স্থানীয়দের সতর্ক করতে প্রচারণা শুরু করেছে কোস্টগার্ড, রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপি ও বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থার একাধিক সেচ্ছাসেবক সদস্যরা। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।
বিজ্ঞাপন
শহরের রিকশাচালক আকরাম বলেন, সকাল থেকে আবহাওয়ায় বেশ পরিবর্তন এসেছে। আকাশে কখনো ঝলমলে রোদ আবার কখনো কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। তাই আমাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাস্তাঘাটে তেমন মানুষ ও বাড়াও হচ্ছে না।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাঃ খালিদ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় জেলায় মোট ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল সন্ধ্যা নাগাদ বাগেরহাট উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আগামীকাল রোববার দুপুরের ভেতর সকলে যাতে আশ্রয় কেন্দ্রে যায় সে লক্ষ্যে মাইকিং করে আহ্বান জানানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ৩ হাজার ৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। আগামীকাল সকাল থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা এলাকাবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে সহযোগিতা করবে। দুপুরের ভেতর সবাই যাতে আশ্রয়কেন্দ্রে যায় সেজন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া নগদ অর্থ শুকনো খাবার ও ওষুধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী বলেন, জেলায় ৩৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ৩৫/১ পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ হয়েছে। এই ৬৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া অন্য পোল্ডারগুলোর বেশ কিছু পয়েন্ট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোথাও যাতে বাঁধ ভেঙে যেতে না পারে, সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মোংলা বন্দরের সহকারী গণসংযোগ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম (মনির) বলেন, সাত নম্বর বিপদ সংকেত পাওয়া মাত্র মোংলা বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে বন্দরের মোট ৬টি জাহাজ নিরাপদ স্থানে নোঙ্গর করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জাহাজ আগমন-বহির্গমন, জাহাজের পণ্য ওঠানামা, পরিবহন ও নৌযান (কার্গো, কোস্টার, বার্জ) চলাচলের কাজ বন্ধ থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দরের হারবার বিভাগে খোলা কন্ট্রোল রুম থেকে দুর্যোগ মোকাবেলা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এছাড়া বন্দরের নিজস্ব নৌযানগুলোকেও নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বন্দরের নিজস্ব উদ্ধারকারী নৌযানও।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ হারুন অর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল ক্রমেই উপকূলের দিক অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে মোংলা বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। মোংলা বন্দর থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে সন্ধ্যা নাগাদ আঘাত আনতে পড়ে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
শেখ আবু তালেব/আরকে