রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে পাবলিক পাকা টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের তিস্তার চরাঞ্চল পল্লীমারী বাজারে পাবলিক প্লেসে টয়লেট নির্মাণের বদলে একই গ্রামের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়িতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে নির্মিত পাবলিক টয়লেট সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

পল্লীমারী বাজারের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশির দশকের পরে মূল তিস্তা নদী ভাটির দিকে চলে যায়। এরপর চরপল্লীমারী গ্রামে স্থানীয়দের বসবাস বাড়তে থাকে। গড়ে ওঠে পল্লীমারী নামে একটি বাজার, সরকারি প্রাথমিক স্কুল ও মাধ্যমিক স্কুল। চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানু এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে সরকার। আর বাজারে পাবলিক টয়লেট না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় ক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের। মলমূত্রের বেগ হলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ধান, পাট ও ভুট্টা খেতের আড়ালে কিংবা খোলা মাঠে যেতে হয়।

এ অবস্থায় ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নে উপজেলা পরিষদ পল্লীমারী বাজারে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দরপত্র আহ্বান করে এবং ঠিকাদারের মাধ্যমে পল্লীমারী বাজারে নলকূপ এবং পানির পাম্পসহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট পাবলিক টয়লেটের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে। তবে টয়লেট পাবলিক প্লেসে নির্মাণ না করে, একই গ্রামের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়ির ভেতরে এ টয়লেট নির্মাণ করে দেয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আর বাড়ির গেট বন্ধ থাকায় বাজারের ব্যবসায়ী এবং ক্রেতারা এর সুফল পাচ্ছেন না।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী চরপল্লীমারী বাজারে মুদিদোকান, সার-কীটনাশক, চায়ের দোকানসহ অন্তত ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্থানীয় দোকানদাদের ভাষ্য মতে, কৃষিনির্ভর এলাকা হওয়ায় সকাল থেকে দুপুর এবং বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকে। বাজারের আশপাশ কোথাও নেই মলমূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা। বাজারের পাশে একটি বাড়ির ভেতরে পাকা পাবলিক টয়লেট আছে। সেটিও বাড়ির মালিক টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে। বাজারের কিংবা বাহিরের কেউ পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে পারে না।

বাজারের মুদি দোকানদার আব্দুল আজিজ ও আমিরুল ইসলাম বলেন, বাজারটি গড়ে ওঠার প্রায় এক যুগ হয়েছে। কিন্তু পাবলিক টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। আর পাবলিক টয়লেট না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। বিশেষ করে বাহির থেকে কেউ এলাকায় আসলে টয়লেট না থাকায় মলমূত্রের বেগ হলে তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

পল্লীমারী গ্রামের কৃষক ও বাজারে আসা ক্রেতা ওবায়দুল হক বলেন, সুপেয় পানি ও মলমূত্র ত্যাগের জন্য বাজারে একটা পাবলিক টয়লেটের খুবই প্রয়োজন। উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন এর উদ্যোগ নেবে। 

পল্লীমারী গ্রামের কৃষক ইলিয়াস মিয়া বলেন, অনেকদিন আগে শুনেছি বাজারে একটা পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রায় দুই বছর আগে সরকারের লোকজন এসে বাজারের পাশে একজন ব্যবসায়ীর বাড়ির ভেতরে নলকূপ এবং পানির পাম্পসহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট টয়লেট নির্মাণ করে দিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীর বাড়ির ভেতরে যদি সরকারি অর্থায়নে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়ে থাকে, তাহলে পাবলিকের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া দরকার। 

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও তার ভাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে খুশি করতে দুই জনপ্রতিনিধির আস্থাভাজন ব্যক্তির বসতবাড়ির ভেতরে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে দিয়েছে। ফলে বাজারের দোকানদার এবং ক্রেতারা কেউই ব্যবসায়ীর বসতবাড়ির ভেতরে সেই টয়লেট ব্যবহার করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছর এডিপির বরাদ্দে পল্লীমারী বাজারে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাবকারী ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান। তারই বড় ভাই হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পল্লীমারী বাজারে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের জন্য যে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেখানেই নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এডিপির অর্থায়নে প্রকল্প নির্ধারণ ও অনুমোদনে উপজেলা প্রকৌশলীর কোনো পাওয়ার নেই। 

তিনি আরও বলেন, পল্লীমারী বাজারে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় পর চূড়ান্ত বিল পরিশোধের আগে কাজের গুণগতমান পরিদর্শনে গিয়ে নির্ধারিত জায়গা নিয়ে আমি নিজেও বিব্রত হন। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর