গোপালভোগে জমেছে আমের হাট, প্রতি মণে দাম বেড়েছে হাজার টাকা
জমে উঠেছে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট। শনিবার (২৫ মে) গোপালভোগ বা রানিপছন্দ জাতের আম কেনাবেচা শুরু হয়েছে রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে। একই সঙ্গে কেনা-বেচা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুটি জাতের আমও। তবে গত মৌসুমের তুলনায় এবার সব আমের দাম বেশি বলেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। গত মৌসুমের তুলনায় এবার প্রতিমণ আম ১ হাজার টাকা বেশি দামে কেনাবেচা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে গুটি জাতের পরে এই প্রথম সুস্বাদু কোনো আম বাজারে উঠেছে। জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে গুটি জাতের আমের মধ্যে গোপালভোগ কেনাবেচা হয়েছে। এই হাটে প্রকারভেদে প্রতিমণ গোপালভোগ আম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। আর গুটি জাতের আম প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।
বিজ্ঞাপন
দুপুরে হাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার চরঘাট, বাঘা, মোহনপুর, দুর্গাপুর উপজেলার আম কেনাবেচা হচ্ছে বানেশ্বর হাটে। হাটে চাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ইঞ্জিনচালিত নছিমন-করিমনে করে আম নিয়ে আসছেন। এসব গাড়িতে ৩০ থেকে ৬০ ক্যারেট (আম রাখার ঝুড়ি) আম থাকছে। সড়কের ওপরে বসা আমের হাটে কেনা-বেচা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। হাটে শুধু পাকা আমই নয়, আচার তৈরির জন্য অনেক ব্যবসায়ী ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা কিনছেন কাঁচা আমও। তবে আচার তৈরির এসব আম প্রতিমণ কেনাবেচা হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে ।
৩৫ টা গাছ নিয়ে আব্দুল হান্নানের গোপালাভোগ আমের বাগাম। তিনি চারটি গাছে আম পেড়ে বানেশ্বর হাটে বিক্রি করতে এসেছেন। আব্দুল হান্নান বলেন, গাছে পাকা আম দেখা দিয়েছে। রাতে পাকা আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। আজ প্রথম গোপালভোগ জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। চারটি গাছের আম হয়েছে ৭৩ ক্যারেট।
বাজারে আমের দাম কেমন মনে হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল হান্নান বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের দাম ভালো আছে। শেষ পর্যন্ত এমন দাম থাকলে ভালো টাকা পাব। এ বছর গাছে আম কম। তাই চাহিদা বেশি। অনেক ব্যবসায়ী গিয়ে বাগান চুক্তি আম কিনতে চাচ্ছে, দেইনি। গত বছর মৌসুমের শুরুর এই সময়ে আমের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ। কিন্তু এ বছর প্রতিমণে এক হাজার টাকা বেশি।
বানেশ্বর হাটের আম বিক্রেতা রইসুল ইসলাম বলেন, আজকেই প্রথম হাটে গোপালভোগ বা রানিপছন্দ আম বিক্রি হচ্ছে। এর আগে গুটি জাতের আম বিক্রি হয়েছে। তবে গুটি জাতের আমের চাহিদা কম। যারা কিনেছেন তারা আচার করার জন্য কিনেছেন। এখন গোপালভোগ আম কেনাবেচা হচ্ছে, এই আম মানুষ পাকা অবস্থায় খাবে। এখন আস্তে আস্তে সব আম পেকে যাবে।
চাকরির সুবাদে গত বুধবার রাজশাহীতে এসেছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলার সাইফুল ইসলাম। বাড়ি ফেরার পথে রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে গাড়ি থামিয়ে আম কিনতে দেখা গেছে তাকে। এ সময় তিনি বলেন, রাজশাহীর আমের সুনাম দেশব্যাপী আছে। রাজশাহীতে এসেই আম খেয়েছি। তবে সেই আম ততটা ভালো লাগেনি। তাই বাড়ি ফেরার পথে বানেশ্বর হাট থেকে দুই মণ গোপালাভোগ আম কিনেছি।
তিনি আরও বলেন, বুধবার যে আম খেয়েছিলাম তার থেকে হাটের গোপালাভোগ আমের স্বাদ ভালো লেগেছে। এই আম মিষ্টি। কয়েকটা পাকা ছাড়া সব আম কাঁচা কিনেছি। প্রতিমণ আমের দাম নিয়েছে ২৮০০ টাকা। রাজশাহীতে আসার আগে পরিবারের সদস্যরা তাকে আম নিয়ে যেতে বলেছিলেন। তাই বেশি করে নিয়ে যেতে হচ্ছে আম।
আড়তে আম বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, হাটে আম বিক্রি হচ্ছে ঠিক। তবে খুচরা ক্রেতা কম। বেশির ভাগ আম আড়তদাররা কিনে নিচ্ছেন। তারা একসঙ্গে চাষি ও ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি করে আম কিনে ট্রাক ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠান। তবে সড়কের পাশে খুচরাভাবে আম কেনা-বেচা হচ্ছে। হাটে প্রতিদিন আম কেনা-বেচা হচ্ছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত হাটের দিন (শনিবার-মঙ্গলবার) বেশি আম কেনাবেচা হয়।
ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুয়ায়ী এ বছর লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি আম গাছ থেকে নামানো যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন আম্রপালি এবং ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
বানেশ্বর আমের হাটের ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, রাজশাহীর ভালো আমগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপালাভোগ, লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া। হাটে গোপালভোগ আম আশা শুরু হয়েছে। লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া আসতে বাকি। হাটে আমের আমদানি বেড়েছে। এবার তুলনামূলক আমের ফলন কম। তবে ফলন কম হলেও আমের দাম ভালো আছে। গত বছর মৌসুমের শুরুতে গোপালভোগ আমের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ। কিন্তু এ বছর একই সময় প্রতিমণ আম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়।
প্রসঙ্গত, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ টন।
শাহিনুল আশিক/আরএআর