এমপি আনার হত্যা
শিলাস্তির বিচার চান দাদা
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা শিলাস্তি রহমানের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায়। জন্ম নাগরপুরে হলেও তিনি বড় হয়েছেন ঢাকায়। দুইবোনের মধ্যে শিলাস্তি বড়।
শনিবার (২৫ মে) দুপুরে শিলাস্তি রহমানের গ্রামের বাড়ি উপজেলার ধুবড়িয়া ইউনিয়নের পাইসানা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দোতলা ভবন বিশিষ্ট বাড়ির পুরোটাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, পাশের টিনের ঘরে তালা ঝুলছে। কক্ষগুলোর ভেতরে নেই কোনো আসবাবপত্র। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে কেউ না থাকায় আর্বজনা পড়ে রয়েছে ঘরে ও বাইরে। তবে এলাকার কেউ তাকে চেনেন না।
বিজ্ঞাপন
শিলাস্তি রহমান উপজেলার ধুবড়িয়া ইউনিয়নের পাইসানা গ্রামের আরিফুর রহমানের মেয়ে। ইতোমধ্যে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
গ্রামের বাড়িতে গিয়ে শিলাস্তির বাবার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম মিয়াকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, দুই বোনের মধ্যে শিলাস্তি বড়। তার বাবা ঢাকায় জুটের ব্যবসা করে। ছোটবেলা থেকেই তারা ঢাকার উত্তরায় বসবাস করে। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসলেও দুই-একদিন পর আবার চলে যেত। শিলাস্তির চলাফেরা উচ্ছৃঙ্খল। দিনের পর দিন বাড়ির বাইরে সময় কাটানোর কারণে তাদের সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়েছি। পরিবারের কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না।
সেলিম মিয়া বলেন, এমপি আনার হত্যার ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর জানতে পারি শিলাস্তি ওই ঘটনায় জড়িত। এতে আমরাও বিব্রত অবস্থায় আছি। আমরাও তার বিচার চাই।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার পরপরই শিলাস্তির বাবা আরিফুর রহমান ও দাদা ঠান্ডু মিয়াসহ পরিবারের সবাই ঢাকায় চলে যান। শিলাস্তির বাবা আরিফুর রহমান দ্বিতীয় বিয়ে করেন। শিলাস্তির মায়ের মৃত্যুর পর তার সৎমায়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। কয়েক বছর পরপর তারা গ্রামের বাড়িতে আসেন। শিলাস্তি উচ্ছৃঙ্খল থাকায় পরিবারের অনেকের সাথেই তার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। শিলাস্তি বড় হওয়ার পর গ্রামে তেমন না আসায় প্রতিবেশীদের কাছে তিনি অপরিচিত।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিকুর রহমান উজ্জল বলেন, শিলাস্তির সম্পর্কে আমার তেমনটা জানা নেই। শুনেছি একজন সংসদ সদস্য হত্যার ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি অপরাধী প্রমাণ হলে আইনানুযায়ী তার শাস্তি হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই শিলাস্তির পরিবার ঢাকায় বসবাস করে। গ্রামের বাড়িতে তার কেউ থাকে না। তার বিষয়ে আমাকে কেউ তথ্য দিতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার ভারতীয় ঘনিষ্ট বন্ধু পশ্চিমবঙ্গের উত্তর২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার অন্তর্গত ১৭/৩ মণ্ডলপাড়া লেনের বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে দুপুরে চিকিৎসক দেখানোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। কিন্তু সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। এরপর গত ২২ মে কলকতার নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে তার খুন হওয়ার বিষয়টি জানায় ভারতীয় পুলিশ।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শিমুল ভূইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইয়া ওরফে আমানুল্যা সাইদ, তানভীর ভূইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ পুলিশ। শুক্রবার (২৪ মে) তাদের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর