কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজন ও নেতাকর্মীরা। হত্যার ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তার মরদেহের সন্ধান না পাওয়ায় হতাশা বাড়ছে স্বজনদের মাঝে। 

শুক্রবার (২৪ মে) সকালে কালীগঞ্জ এসে পৌঁছেছেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। ভূষণ রোডস্থ বাড়ির সামনে বসে বাবার হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন তিনি। 

এ সময় মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, আমি ভারতের ভিসা পেয়েছি। তবে ডিবি অফিস থেকে আমাকে বলেছে, যখন প্রয়োজন হবে তখন ভারতে যেতে হবে। 

তিনি বলেন, আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তারা প্রি- প্লানিং করে হত্যা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করেই আমার বাবাকে হত্যা করেছে। দুই মাস ধরে পরিকল্পনা করে সাজিয়ে গুছিয়ে তারা এই কাজটি করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে অনেকে জড়িত আছে। সুষ্ঠু তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে কারা এর সাথে জড়িত। যার নাম উঠে এসেছে প্রশাসনকেই তাকে খুঁজে বের করতে হবে। বিদেশ থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। কান টানলে মাথা আসবে। তার মাথার ওপরে আরও অনেকে থাকতে পারে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তদন্তের মাধ্যমে যেটাই বেরিয়ে আসুক, সেটা রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক যেটাই হোক তাদের শাস্তি চাই। আমার বাবা কালীগঞ্জ শহরে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রাজনীতি করছেন, তার শত্রু থাকতেই পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে হত্যা কি না সেটাও ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না।

মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ২০০৪ সালে বাবা যখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতো, তখন বিএনপির একটি গ্রুপ তার পেছনে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছিল। পরবর্তীতে তার নামে সকল মামলা মিথ্যা বলে প্রমাণ হয়েছে আদালতে। আমার বাবার নামে যদি অভিযোগ সত্যি হতো তাহলে তো আর আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হতো না। বাবা একজন নেতা হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন, এজন্য তার শত্রুও ছিল। এখন অনেক পুরাতন কথা উঠে আসছে। এসব পুরাতন কথা টেনে সামনে আনার কোনো দরকার নেই। সে যদি বলতেই হয় তাহলে এটাও সামনে আনেন, আমার বাবা দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে বাড়িতে আসতে পারেননি, আমাদের মুখ দেখতে পারেননি সেই কষ্টের কথাও তুলে ধরেন আপনারা। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাকে ফোন দিয়েছেন। তিনি আমাকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তিনি বলছেন- ‘আমি তোমার সাথে আছি। তুমি আমাকে বলেছ তোমার বাবাকে খুঁজে দিতে, আমি ইন্ডিয়ায় পুলিশকে দিয়ে তোমার বাবাকে খুঁজে দিয়েছি। আর কি চাও আমাকে বলো। এখন পুলিশ তদন্ত করবে, রিপোর্ট আসলে আমি ব্যবস্থা নেব। আর কিছু করতে হলে আমাকে জানাও।’ আমি তখন বলেছি, না আপা আপনি যা ভালো মনে করেন করবেন, আপনি বিচক্ষণ, আপনিই এর বিচার করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা আছে। তিনি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার করবেন বলে আশা করি।

ভূষণ রোডস্থ বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনানের বাড়ির সামনে আসেন তার ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তাকে ঘিরে রাখেন শত শত নেতাকর্মী। প্রিয় নেতার মরদেহের খোঁজ পাওয়া গেল কি না তার খবর জানতে চান তারা।  তাকে সান্ত্বনা দেন নেতাকর্মীরা।

কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কলকাতায় মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত হওয়ার দুই দিন পার হলেও এখনো মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে আমাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। শেষবারের মতো প্রিয় নেতাকে দেখতে চাই। তার লাশের এক টুকরো মাংস হলেও সেটাকে নেতা মনে করে জানাজা করতে চাই। আর তার হত্যার সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। 

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর