‘আমাদের এমপি (আনোয়ারুল আজীম আনার) একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। বিভিন্ন গণমাধ্যম, গোয়েন্দা বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন তিনি ভারতে খুন হয়েছেন। আনারের মতো একজন এমপিকে খুব সহজেই কালীগঞ্জের মাটিতে খুন করা যেত। কারণ তিনি একা রাত ১টা, ২টা, ৩টা নেই ঘুরে বেড়াতেন। একা একা মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়াতেন। আজকে ভারতের সরকার বলছে ভারতের কেউ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু আমার ধারণা ভারতের কেউ যদি জড়িত না থাকে তাহলে এমন নৃশংসভাবে একটা মানুষকে হত্যা করা সহজ নয়। এখানে একটা চক্র কাজ করেছে। আমরা চাই যারাই তাকে হত্যা করুক, আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত থাকলে বা দলীয় কোন্দলে যদি হত্যা করা হয়ে থাকে অবশ্যই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকালে কথাগুলো বলছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব হোসেন। তার দাবি- ভারতের লোকজন এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ স্কুল রোডে অবস্থিত এমপির কার্যালয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।   

আইয়ুব হোসেন বলেন, আনারের মতো জনপ্রিয় নেতাকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে, তার লাশটা এখনো আমরা পাচ্ছি না, এটা অনেক দুঃখজনক। তার লাশটা এখনো পাচ্ছে না কেন। এতদিন লাগবে কেন। দ্রুত তার লাশটি কালীগঞ্জের মাটিতে চাই। এই আনার কয়েক হাজার মানুষের জানাজা পড়েছেন। এমনও দিন গেছে ৫-৬ জনের জানাজায় শরিক হয়েছেন। যদি তিনি সত্যিই মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তার লাশটা কালীগঞ্জের মাটিতে দেখতে চাই এবং আমরা তার জানাজা পড়তে চাই। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার। ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। বুধবার (২২ মে) তাকে হত্যা করা হয়েছে খবর শোনার পর পুরো কালীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। 

এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের জন্ম ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসন থেকে তিন বার (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) নির্বাচিত আনার একজন ক্রীড়া সংগঠক এবং এক সময়ের জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা এমপির কার্যালয় ও তার বাসভনের সামনে এসে জড়ো হয়েছেন। আজও একই চিত্র দেখা গেছে। নেতাকর্মীদের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সবাই জানতে চাইছে কেন আনার খুন হলেন। ভারতে গিয়ে হত্যা কেউ মেনে নিতে পারছে না। নেতাকর্মীসহ সবার মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। 

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাংগাঠনিক সম্পাদক আনিচুর রহমান মিঠা মালিতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১২ মে কানের চিকিৎসার জন্য ভারতে যান এমপি। সেখানে তাকে অপহরণ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছি ছয়জন কিলার এমপির হত্যার সঙ্গে জড়িত। এই হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন পার্শ্ববর্তী উপজেলা কোটচাঁদপুর উপজেলার বাসিন্দা। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, আক্তারুজ্জামান শাহিনকে অচিরেই দেশে ফিরিয়ে এনে দেশের প্রচলিত আইনে তাকে শাস্তির আওয়াই আনা হোক। সেই সঙ্গে এমপি আনারের মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।

কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপনারা সবাই অবগত আছেন, আমরাও রাষ্ট্রের মাধ্যমে অবগত হয়েছি এমপি আনার খুন হয়েছেন। আমরা ধরেই নিয়েছি তিনি খুন হয়েছেন। এখন আমরা হাজার হাজার নেতাকর্মী অপেক্ষা করছি। তার মরদেহটা যেন আমাদের কালীগঞ্জের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে কীভাবে তিনি খুন হয়েছেন সেটা গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে, তাদের তদন্ত শেষ হলেই বোঝা যাবে তিনি কীভাবে, কী কারণে খুন হয়েছেন।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম অপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনপ্রিয় এমপি ছিলেন আনার। তার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এই কত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করবে সেই অপেক্ষায় আছি। তবে রাজনৈতিক ভাবে আনারের কারো সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। প্রকাশ্যে কারো সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে দেখিনি। তবে কে বা কারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সেটা তদন্তের মাধ্যমেই উদ্ঘাটন হবে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর