দশ বছর বয়সে সোনাতলা উপজেলা থেকে বগুড়া শহরে ট্রেনে চড়ে এসেছিলেন বেলাল উদ্দিন (৬৪)। এরপর থেকে বহু দিন ট্রেন ভ্রমণ করেছেন এই পথে। বগুড়া শহরে পড়ালেখার সুবাদেও করতে হয়েছে ট্রেনে যাতায়াত।

এই ভ্রমণগুলোর অধিকাংশ ছিল বিনা টিকিটে। যার সঠিক সংখ্যাও মনে নেই বেলাল উদ্দিনের। কিন্তু জীবনের সায়াহ্নকালে অনুশোচনায় পড়েছেন তিনি। বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের কাছে টিকিট বাবদ বকেয়া সাত হাজার টাকা শোধ করেছেন এই বৃদ্ধ।

মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে বগুড়া রেলওয়ের স্টেশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাজেদুর রহমান সাজুর কাছে গিয়ে এই বকেয়া অর্থ পরিশোধ করেন তিনি।  

বেলাল উদ্দিনের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলার সুজায়েত পাড়ায়। তবে বর্তমানে তিনি বগুড়া শহরের জহুরুলনগরে বসতবাড়ি করেছেন। বেলাল উদ্দিন বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেছেন। সর্বশেষ তিনি কাহালু উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে ২০২০ সালে অবসরগ্রহণ করেন।

আলাপকালে জানা যায়, বেলাল উদ্দিনের জন্ম ১৯৬০ সালে। তিনি ১৯৭০ সালে সোনাতলা থেকে বগুড়ায় যাতায়াত শুরু করেন। পরবর্তীতে বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়াশোনার সুবাদে প্রতি সপ্তাহে যাতায়াত করতে হয় তাকে। এ ছাড়া আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বগুড়ায় হওয়ায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল বগুড়ায়। এ সময়ে তিনি বিনা টিকিটে যাতায়াত করেছেন। ওই সময় এটাকে স্বাভাবিক হিসেবেই মনে করতেন তিনি।

বেলাল উদ্দিন বলেন, একজন মুমিন বান্দার উচিত হবে, নিজের হক, বিবি বাচ্চার হক, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনের হক এবং দেশের আপামর জনগণের হক আদায় করা। এই হক আদায় করতে গিয়ে আমি বিবেকের কাছে দংশিত হই। এরপর আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিই আমার জীবনের সেই হক আদায় করা দরকার। পরে আমি আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তিনি আমাকে পরামর্শ দেন আপনি ওই টাকা টিকিটের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারেন, যাতে সরকারের কোষাগারে যায়। পরে আজকে এসে সব হিসেব করে ৭ হাজার টাকা জমা দিলাম। মূলত আখিরাতের ভয় থেকেই আমি এই টাকাটা পরিশোধ করেছি।  কারণ মৃত্যুর পর অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। টাকা জমা দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। আর এ কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার স্ত্রী।

বকেয়া টাকার হিসেব সম্পর্কে জানতে চাইলে বেলাল উদ্দিন বলেন, ডিপ্লোমা শেষে ১৯৮৩ সালে চাকরি শুরু করি। এর আগের ওই ১২ বছরে যদি সপ্তাহে আমার দুই বার যাতায়াত করে থাকি। এই হিসাবে ৫২ সপ্তাহকে ১২ দিয়ে গুণ করেছি। আবার সেটাকে ২ দিয়ে গুণ করার যা আসে সেটাকে ওই সময়ের ট্রেনের টিকিট মূল্য ৫ টাকা দিয়ে গুণ করে ৬ হাজার টাকার কিছু বেশি পরিমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু আমি সব মিলিয়ে ৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি।  

এ বিষয়ে বগুড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, বিষয়টি ভালো লাগার। তার জমা দেওয়া টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। ট্রেন আমাদের জাতীয় সম্পদ। অনেকেই বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকেন।  এটা কোনোভাবেই উচিত না। মাঝেমধ্যে অনেকে বিবেকের তাড়নায় এরকম টাকা পরিশোধ করে যান। এর সংখ্যা অবশ্য কম। এর আগে এক ভদ্রমহিলা ১০ টাকা জমা করেছেন।

আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/এএএ