রাজশাহীর বানেশ্বরে জমেনি আমের হাট
রাজশাহীতে গত ১৫ মে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হলেও জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বরে আমের সরবরাহ নেই। যদিও বিগত বছরগুলোর এই সময়ে গুটি আমের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকত বানেশ্বর হাটে। কিন্তু এ বছর হাটে আম নেই বললেই চলে।
সোমবার (২০ মে) বিকেলে পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। হাটের যে সব জায়গায় আম কেনা-বেচা হয়, সেসব জায়গায় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। কেউবা সামান্য আম নিয়ে বসে কেনাবেচা করছেন। তবে ব্যবসায়ী ছাড়া ক্রেতা খুবই কম আসছেন বলে জানান বিক্রেতারা।
বিজ্ঞাপন
ক্রেতা-বিক্রেতাদের দাবি- গুটি জাতের হলেও বানেশ্বর হাটে আমের চাহিদা ভালো আছে। তবে জোগান অনেক কম। এই হাট থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা আম কিনে থাকেন। হাটে যে আমগুলো চাষি বা বিক্রেতারা বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন তা চাহিদার তুলনায় কম। ফলে হাটে আম নিয়ে আসা মাত্রই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ সময় বড় বড় আড়তদাররা আমভর্তি ভ্যান গাড়ি ও নসিমন-করিমন তাদের আড়তে ঢুকিয়ে নিচ্ছেন। এরপর ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেকক্ষণ পর পর হাটে ব্যাটারিচালিত ভ্যান গাড়ি ও ইঞ্জিনচালিত নসিমন-করিমনে করে আম নিয়ে আসছেন চাষি ও বিক্রেতারা। এসব গাড়িতে ৩০ থেকে ৪০টি ক্যারেট (আম রাখার ঝুড়ি) আম থাকছে। যা চাহিদার তুলনায় কম। গুটি জাতের এই আমগুলো প্রকারভেদে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ দরে কেনাবেচা হয়েছে। তবে এসব আম পরিপক্ব না হওয়ায় শুধুমাত্র বিভিন্ন আচার তৈরির কোম্পানির প্রতিনিধিরা কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করছেন।
বানেশ্বর হাটের আম বিক্রেতা রাজিবুল ইসলাম বলেন, এ বছর গাছে খুব কম আম এসেছিল। সাতটি গাছে আম হয়েছে মাত্র ২০ ক্যারেট। একই গাছে গত বছর আম হয়েছিল ৫০ ক্যারেট। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের দাম ভালো আছে। এ বছর গুটি জাতের কাঁচা আম প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৪০ টাকা দরে।
অপর আম বিক্রেতা রমজান আলী জানান, বিগত বছরগুলোতে এই সময়ে বানেশ্বর হাটে প্রচুর আম ওঠে। কিন্তু এ বছর হাতেগোনা অল্প কিছু আম উঠেছে হাটে। তবে আগামী শনিবার (২৫ মে) থেকে বানেশ্বরে আমের হাট জমবে। ওইদিন থেকে গোপালভোগ বা রানিপছন্দ জাতের আম পাড়া শুরু হবে। এই আমগুলো খেতে সুস্বাদু। তাই ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহ ভালো থাকবে আশা করা হচ্ছে। এতো দিন যে আমগুলো কেনাবেচা হয়েছে সেগুলো আচারের জন্য।
ম্যাংগো ক্যালন্ডার অনুয়ায়ী এ বছর গোপালভোগ বা রানিপছন্দ ২৫ মে, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি গাছ থেকে নামানো যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন আম্রপালি এবং ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আড়ৎদার জানায়, জাতের আম পাড়া শুরু হবে ২৫ মে থেকে। আগামি ২৫ মে শনিবার। শনিবার ও মঙ্গলবার বানেশ্বরে হাটবার। সেই হিসেবে ধরা হচ্ছে আগামী শনিবার থেকে পুরো দমে বানেশ্বরে আমের হাট জমবে। এখন অল্প কিছু আম কেনাবেচা হচ্ছে। যেগুলো দিয়ে আচার তৈরি হবে।
এ বিষয়ে বানেশ্বর হাটের ইজারার দায়িত্বে থাকা তৌহিদুল ইসলাম তোতা বলেন, হাটে গুটি জাতের আম উঠছে। তবে তুলনায় অনেক কম। আগামী শনিবার গোপালভোগ আম হাটে উঠবে। আশা করা যাচ্ছে তারপর থেকে জমবে আমের কেনাবেচা। এখন বাজারে শুধু আচারের আম কেনাবেচা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ টন।
শাহিনুল আশিক/আরএআর