একরাম হত্যার এক দশক : এখনো পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামি
ফেনীর আলোচিত ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পূর্ণ হলো আজ। এ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। রায় ঘোষণার ৬ বছর পার হয়ে গেলেও রায় কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে পরিবার।
২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় একরামকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে, কুপিয়ে, গুলি করে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ওইদিন এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ফুলগাজীর বিএনপি নেতা ও উপজেলা নির্বাচনে একরামের প্রতিদ্বন্দ্বী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মিনারকে আসামি করা হয়। মামলাটির তদন্ত শেষে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ। এর মধ্যে এক আসামি র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ মামলার রায়ে ৩৯ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। রায়ে খালাস পান বিএনপির নেতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীসহ ১৬ জন। স্থানীয় নির্বাচন থেকে আসামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে একরামকে হত্যা করা হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণার ৬ বছর পার হয়ে গেলেও উচ্চ আদালতে শুরু হয়নি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিলের শুনানি।
বিজ্ঞাপন
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ জনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, ফেনী পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর আবদুল্লাহ হিল মাহমুদসহ ২২ আসামি কারাগারে রয়েছেন। আর পলাতক রয়েছেন আরও ১৭ জন।
পলাতক আসামিরা হলেন– তৎকালীন ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন জিহাদ, আবিদুল ইসলাম, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন, আরমান হোসেন, জাহেদুল হাসেম, জিয়াউর রহমান, জসিম উদ্দিন, এমরান হোসেন, রাহাত মো. এরফান, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান, কফিল উদ্দিন মাহমুদ, মোসলে উদ্দিন, ইসমাইল হোসেন, মহিউদ্দিন আনিছ, মো. বাবলু ও টিটু। তার মধ্যে চার জন জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে পালিয়ে যান। পলাতক আসামিদের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত জাহিদ হোসেন জিহাদ ও আবিদুল ইসলাম আবিদ পালিয়ে দেশের বাইরে চলে যান। পলাতক ও কারাগারে থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
জানতে চাইলে নিহতের স্ত্রী তাসমিন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এতদিন পার হয়ে গেলেও এখনো রায় কার্যকর না হওয়া দুর্ভাগ্যের। এমন তৎপরতায় আমরা হতাশ। পরিবার নিয়ে আজও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা অনেকে দেশে ও দেশের বাইরে খুব আরাম-আয়েশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ফিরিয়ে আনতেও কখনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত রায় কার্যকর চাই।
ফেনী আদালতের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ পৃথক দুটি আপিল করেছে। উচ্চ আদালতে মামলাটি বর্তমানে ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের মধ্যে সদর থানা এলাকার ১৩ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পলাতক অন্য আসামিদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
তারেক চৌধুরী/এসএসএইচ