বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন, সংগঠনবিরোধী ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপের অভিযোগে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সদর উদ্দিন খানকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

গত ১১ মে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বিষয়টি গতকাল শনিবার (১৮ মে) জানাজানি হয়। সদর উদ্দিন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত আপনার বক্তব্য আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে এবং তা সংগঠনের রীতিনীতি ও আদর্শ পরিপন্থী। শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে প্রদত্ত আপনার বক্তব্য সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী এবং আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, আপনার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা ব্যাখ্যাসহ লিখিত জবাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

কারণ দর্শানোর নোটিশের অনুলিপি পাওয়া কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে নোটিশটি হাতে পেয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে সদর উদ্দিন খান তার ভাইকে চেয়ারম্যান পদে জেতানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তার পক্ষে তিনি নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করেছেন। এর আগে তার ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচন করার জন্য থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন এমন অভিযোগও উঠে। সে সময় দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, গত ১ মে সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের গোসাইডাঙ্গি গ্রামে ছোট ভাই চেয়ারম্যানপ্রার্থী রহিম উদ্দিন খানের নির্বাচনী সভায় তার বক্তব্যের ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই বক্তব্যে সদর উদ্দিন খান বলেন, ‘আল্লাহ পাক উন্নয়ন করাবে আমাকে দিয়ে। আমার সঙ্গে যারা বিরোধিতা করবে তারা আল্লাহর সঙ্গে বিরোধিতা করবে। শয়তানরাও মসজিদে আসবে, শয়তানরাও গোরস্থানে শোবে। শয়তানরা মসজিদে এসে সুখে থাকতে পারবে না। কোন ওয়াক্তে যাবে, কোন ওয়াক্তে যাবে না। আর গোরস্থানে গেলে শয়তানদের যেভাবে মাটিচাপা হবে আপনারা কল্পনাই করতে পারবেন না।’ 

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি শয়তানের অনুসারীদের বলব, শয়তানের সঙ্গে থেকে এই শাস্তি ভোগ করার দরকার নেই। যে কয়েকজন শয়তান আছে থাক, তা বাদে সবাই আপনারা একসঙ্গে আসবেন। একসঙ্গে হলে জয় সুনিশ্চিত করেন। আল্লাহ পাকের রহমতে আজকে বলে গেলাম জয় সুনিশ্চিত।’

প্রসঙ্গত, খোকসা উপজেলায় প্রথম ধাপে গত ৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সদর উদ্দিন খানের ভাইকে পরাজিত করে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আল মাসুম মোর্শেদ।

রাজু আহমেদ/এমজেইউ