ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দোয়াত-কলম প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল। ২০২১ সালে উপনির্বাচনে প্রথমবার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান নির্বাচিত হন তিনি।

পরপর দুই নির্বাচনী হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৩ বছরে তার আয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পাশাপাশি সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৭ দশমিক ৭০ গুণ। শুসেন চন্দ্র শীল তার হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন। 

২০২১ সালে উপনির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় বার্ষিক আয় ২ কোটি ৪৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৯২ টাকা উল্লেখ করেছিলেন শুসেন চন্দ্র শীল। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৭৯ হাজার ২২১ টাকায়। সে হিসেবে ৩ বছরের ব্যবধানে ১ দশমিক ৮০ গুণ আয় বেড়েছে।

দুটি হলফনামায় উল্লেখিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২১ সালে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৫২ লাখ ৬৫ হাজার ৮৮৯ টাকায়। সে হিসেবে ৩ বছরের ব্যবধানে শুসেন চন্দ্র শীলের মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৭ দশমিক ৭০ গুণ।

২০২১ সালের হলফনামায় কৃষি, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো আয় ছিল না শুসেনের। নিজের একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা হতে উক্ত টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন তিনি। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামায় তার বার্ষিক আয় ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৭৯ হাজার ২২১ টাকা দেখানো হয়েছে। উক্ত আয়ের খাত হিসেবে ব্যবসা হতে ৪ কোটি ৪০ লাখ ৩৯ হাজার ২২১ টাকা ও অন্যান্য খাতে (সম্মানি ভাতা) ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। হলফনামায় প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের কোন আয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, স্থাবর সম্পদের মধ্যে শুসেন চন্দ্র শীলের ১৬৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ অকৃষি জমি (অর্জনকালীন সময়ের আর্থিক মূল্য) ২ কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ৭০০ টাকা, একটি দালান ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, দুইটি বাড়ি ৪২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং এক দশমিক ৭৭ শতাংশ জায়গায় একটি পুরাতন বিল্ডিং ৩২ লাখ ২ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। 

২০২১ সালের হলফনামায় একমাত্র স্থাবর সম্পদ হিসেবে ৩৫ দশমিক ২৫ শতাংশ অকৃষি জমি (অর্জনকালীন সময়ের আর্থিক মূল্য) ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকার তথ্য উল্লেখ করেছিলেন শুসেন।

এবারের হলফনামা অনুযায়ী, শুসেনের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ ২৯ হাজার ৮৬৩ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৪১ হাজার ২৯৮ টাকা, ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ, ২৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকার দুটি ডাম্প ট্রাক, উপহার হিসেবে পাওয়া ৭০ হাজার টাকার ১০ তোলা স্বর্ণালংকার (তৎকালীন মূল্য), ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৫০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ৫০ হাজার টাকা, ৩৬ লাখ ৯৬ হাজার ২৮ টাকা ব্যবসায়ের পূর্বের পুঁজি এবং পূর্বের রোলার ও শর্টগান ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। 

২০২১ সালে দাখিলকৃত হলফনামায় দেখা গেছে, শুসেনের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ১ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা, ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি জিপ, ২৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকার দুইটি ডাম্প ট্রাক, উপহার হিসেবে পাওয়া ৭০ হাজার টাকার ১০ তোলা স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৫০ হাজার টাকা, উপহার হিসেবে পাওয়া আসবাবপত্র ৫০ হাজার টাকা ও ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার রোলার ও শর্টগান ছিল। একই হলফনামায় স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকা জমার কথা উল্লেখ ছিল।

রাজনৈতিক জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে শুসেন চন্দ্র শীল আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরবর্তী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক  ও জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। 

২০২১ সালের ১৩ আগস্ট ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকমের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন শুসেন চন্দ্র শীল। বর্তমানে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

তারেক চৌধুরী/আরকে