বাঁ থেকে আনোয়ার হোসেন, হাসানুজ্জামান মিঠু ও এ ই এম মাসুদ রেজা। ছবি : ঢাকা পোস্ট

দ্বিতীয় ধাপে জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণার আর মাত্র একদিন বাকি রয়েছে। শেষ সময়ে এসে বেশ জমে উঠেছে এই উপজেলার নির্বাচন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। আর নির্বাচনী মাঠ জমে উঠতে দুই এমপি ও জেলার আওয়ামী লীগের এক নেতার সমর্থন অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। তবে এই তিনজন প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ায় উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

দ্বিতীয় ধাপে জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল রোববার প্রচারণার শেষ দিন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সদর উপজেলায় ৫ জন ও পাঁচবিবি উপজেলায় ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুই উপজেলায় দুজন দলবিহীন, ৮ জন আওয়ামী লীগ নেতা ও একজন যুবলীগ নেতা রয়েছেন।

এরমধ্যে নির্বাচনী বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলায়। এখানকার ৩ জন প্রার্থী দুই সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সমর্থন পেয়েছেন। দুই সংসদ সদস্য নিজেদের মর্যাদা ও আধিপত্য ধরে রাখতে দুই প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সুযোগটা লুফে নেন জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা। তিনিও এক প্রার্থীকে সমর্থন দেন। এরপর থেকেই জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। আর প্রচার-প্রচারণায় এক-অপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিতে থাকেন।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের এই নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় নেতারা প্রথমে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। একভাগ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের পক্ষে এবং আরেক ভাগ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান মিঠুর পক্ষে। এই দুজনের মধ্যে হাসানুজ্জামান মিঠু জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুর সমর্থন পেয়েছিলেন। আর আনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও এমপির সমর্থন পাননি। হঠাৎই জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এ ই এম মাসুদ রেজা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সমর্থন পেয়ে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন।

তারপর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। সামছুল আলম দুদু এমপির সমর্থন পেয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী হাসানুজ্জামান মিঠুর নিবার্চনী প্রচারণায় তার পক্ষে দাঁড়িয়ে যান জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদ হোসেন হিমু, সদস্য নন্দলাল পার্শী, শেখর চন্দ্র মজুমদার, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক রজমান আলী, দোগাছী ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল আলম সুমন, ভাদসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন, আমদই ইউপি চেয়ারম্যান শাহানুর আলম সাবু, মোহাম্মদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান, ধলাহার ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেনসহ দুদু এমপির অনুসারীরা।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিন এবং যুবলীগের এক নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুর সমর্থন পেয়েছেন হাসানুজ্জামান মিঠু। আর জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সমর্থন পেয়েছেন এ ই এম মাসুদ রেজা। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডলের সমর্থন পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন। এতে দলটির নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ায় তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি।

আর আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির সমর্থন পাওয়া এ ই এম মাসুদ রেজার আনারস প্রতীকের পক্ষে দাঁড়িয়ে যান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান, আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির এপ্লব, জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল হোসেন সাবু, সাধারণ সম্পাদক কালীচরণ আগরওয়ালা, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিলন দেওয়ান, সদরের পুরানাপৈল ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সৈকতসহ স্বপন এমপির অনুসারীরা।

এদিকে এই দুজনের বিপরীতে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডলের সমর্থন পেয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে তার পক্ষে এককাট্টা হয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোয়াজ্জেম হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মন্ডল, শ্রম সম্পাদক আব্দুস সোবহান, উপ-দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, সদস্য হাদু আল মামুন চপল, আরিফ হোসেন লিটন, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার আলীসহ জাকির হোসেনের অনুসারীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও আনোয়ার হোসেনের পক্ষে নেমেছেন।

এতে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এখন দুই এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছেন। নির্বাচনী এক জনসভার বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি এ ধরনের নির্বাচন কোনো দিন করিনি, এটিই প্রথম। তবে অনেকের নির্বাচন করে দিয়েছি। আর জয়পুরহাট-১ আসনের এমপি সামছুল আলম দুদু ভাই তার প্রার্থী দিয়েছেন হাসানুজ্জামান মিঠুকে। অপরদিকে আমার বড় ভাই স্বপন সাহেব (আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি) ঢাকা থেকে বসে মাসুদ রেজাকে সমর্থন দিয়েছেন। এখন জনগণ কাকে বেছে নেবেন সেটি তাদের ইচ্ছা। এমপিদের প্রার্থীকে, না আমাকে? যদি মানুষ শান্তি চায় তাহলে আমাকে বেছে নিতে হবে। আর সন্ত্রাস চাইলে ওই দুই প্রার্থীকে বেছে নিতে হবে বলে এমপির প্রার্থী হওয়ায় তাদেরকে কুমির ও হাঙ্গরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

এদিকে নির্বাচনী পথসভার বক্তব্যে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এ ই এম মাসুদ রেজার পক্ষে মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান ও আরেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হাসানুজ্জামান মিঠু একে-অপরকে দোষারোপ করছেন।

জানতে চাইলে জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কাউকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে পারি না। নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ডেকে এ বিষয়ে নিষেধ করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় আপনার প্রার্থী বলা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হাসানুজ্জামান মিঠু আমার সঙ্গে রাজনীতি করে, এতটুকুই। কিন্তু আমি কারও কাছে ভোট চাইতে পারব না। আমি ঢাকায় আছি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ (জয়পুরহাট-২) এর মোবাইলে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

এই তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছাড়া জেলা যুবলীগের সদস্য খাজা আল আমীন সোহাগ দোয়াত কলম প্রতীক ও জেলা গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম মাসুম কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

এএএ