গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী জাফরউল্যাহকে বসিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান রাজা। এ কাজে তার সহযোগী ছিলেন ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান হাওলাদার মিরন। 

ফরিদপুর-৪ আসনের বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের সঙ্গে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান রাজার ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ফোনালাপটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ওই ফোনালাপটি ৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের। তাদের কথোপকথন নিচে তুলে ধরা হলো-

রাজা: হ্যালো
নিক্সন: ফোন দিছিলেন নাকি, মিসড কল পাইলাম।
রাজা: ফোন দিছিলাম মানে কি শুনেন..... শেষ পর্যন্ত ও থাকতে পারবে না।
নিক্সন: না না না। আপনি মানুষ ভালো না। আপনারে যে মানুষ কয় যে চিটার বাটপার। আসলেই রাজা সাহেব আপনি ভালো মানুষ না।
রাজা: আপনি এইভাবে কথা কইলে আমি কষ্ট পাব।
নিক্সন: আপনি আমারে এই ফোন-টোন দেবেন না। আপনার সাথে আর কথা বলার দরকার নাই। রাজনৈতিক মাঠে আপনি বিপদে পড়লে যে কোনো সময় আমারে ফোন দেন। আপনার ওপরে আমার বিশ্বাস নাই। আসলে ওরাও বিশ্বাস করে না, আমিও আপনারে বিশ্বাস করি না।
রাজা: না না না....
নিক্সন: ওইপক্ষেই আপনি সৎভাবে থাকেন। ওদের খবর আমারে দেওয়ার দরকার নাই। আমি রাজনীতি করি।এসব খবর-টবর আমার লাগে না।
রাজা: আমি একটা কথা বলি।
নিক্সন: আর কথা বলার দরকার নাই। আমি আপনারে চিনে ফেলছি।
রাজা: না, না, না। আপনি বলেন এই একটা বিষয়...
নিক্সন: না,না, না। আপনার কথাবার্তা ভালো না। আপনি আসলেই একটা চিটার টাইপের মানুষ। আমি আপনারে ভুল বুঝছি।
রাজা:না। আমি, আমি...
নিক্সন: শুনেন, শুনেন ভাই। আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য, জনগণের জন্য। কথা বুঝছেন। উন্নয়ন করার জন্য। আমারে ভয় দেখাবে জাফরুল্লাহ। আজ পর্যন্ত জাফরউল্যাহই ভয় দেখাইতে পারে নাই। আর এই চিটার বাটপার কী দেখাবে। আমারে এসব বইলেন না। আপনাদের দলের মধ্যে সব দুই নাম্বার। দুই নাম্বারি করেন। দুই নাম্বারি কইরা আপনারা নিজেরা নিজেরা কোন্দল করেন, নিজেরা ঝামেলা করেন। কথা বুঝছেন। এটা আপনাদের ব্যাপার। আমার না। আমি আপনাকে চিনে ফেলছি। আপনি আর ভবিষ্যতে আমারে ফোন-টোন দিয়েন না। রাজনীতির মাঠে দেখা যাবে।
রাজা: আমি আপনারে একটা কথা বলি।
নিক্সন: আপনি জাতীয় নির্বাচনের আগেও যত ইনফরমেশন দিছেন অর্ধেক ভুল দেন, অর্ধেক ঠিক দেন। আপনি তাল-বেতাল কইরা ফেলেন।
রাজা: আমি যেটুক দিছিলাম (ইনফরমেশন) সেটুক আপনি শেষ পর্যন্ত তো সবই দেখলেন..
নিক্সন: কেন আপনি বলেন নাই জাফরউল্যাহ সাহেব বইসা পড়বে। আমারে কি দেবেন? যে বসে নাই তো।
রাজা: না, না। বসার সব ব্যবস্থা হয়েছিল না? চার-পাঁচ দিন সে বন্ধ ছিল না সব কিছু?
নিক্সন: সেটা তো উনি অসুস্থ ছিলেন। মুরব্বি মানুষ।
রাজা: না, না অসুস্থ না।
নিক্সন: আপনি বলছেন যে আমি আর মিরন মামা বসায় দেব। এই কথা বলেন নাই? আপনি তো বসাইতে পারেন নাই।
রাজা: হ্যাঁ, হ্যাঁ আমরা বলছি। আমরা চেষ্টা করছি। চার-পাঁচদিন বন্ধ ছিল। উনি নির্বাচন শেষ পর্যন্ত কতদিন করতে পারছিল? আমরা তো চেষ্টা করছিলাম। আমি আপনারে যেটুক বলছিলাম। সেটুক দেখছিলেন না দৃশ্যত হওয়ার পথে ছিল? লাস্টে সে তার সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করে ফেলেছিল।
নিক্সন: ঠিক আছে। আপনি আর আমারে ফোন-টোন দিয়েন না। আপনি আপনার মতো রাজনীতি করেন। আমরা আমাদের মতো। এগুলা আর দরকার নাই এখন আর আসলে। ঠিক আছে?

এ ব্যাপারে আকরামুজ্জামানের বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোন কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে কথা হয় ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান হাওলাদার মিরনের সঙ্গে। তিনি জানান, নিক্সনের সঙ্গে কথোপকথনের ওই গলা আকরামুজ্জামানের কি না তা তিনি নিশ্চিত নন। 

ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন উর রশীদ জানান, তিনি নিক্সনের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথোপকথন সংক্রান্ত অডিও ভাইরাল হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। তবে তিনি নিজে সেটি শোনেননি। বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে নানাভাবে টেম্পারিং করা হয়।

তিনি জানান, তিনি কথপোকথন শুনবেন। যদি ওই কণ্ঠ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের হয়ে থাকে তাহলে দলের আদর্শ, নীতি ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে এক লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে হ্যাটট্রিক করেন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। অপরদিকে কাজী জাফরউল্যাহ পান এক লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ভোট। নিক্সনের কাছে (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪) হ্যাটট্রিক পরাজয় বরণ করেন কাজী জাফরউল্যাহ।

জহির হোসেন/আরএআর