মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গত ৮ মে  উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর করে নির্বাচনী কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগে হোসেন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় এর আগে ওই চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে গজারিয়া থানায় মামলা দায়ের হলে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. জুবায়ের। তিনি বলেন, নির্বাচনী কাজে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকারের আদেশে মনিরুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ মে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক, তার ভাই গাজীপুর আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইকবাল হক ও ভাতিজা তানভীর হকরা ওই ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সবাইকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হকের নির্দেশে সোহেলকে মারধর শুরু করেন তার ভাতিজা তানভীর এবং তাদের লোকজন।

ওই ঘটনার সময় পাশ থেকে ছবি ও ভিডিও করছিলেন মানবজমিন পত্রিকার মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি গোলজার হোসেন। পরে তারা গোলজারের ওপর হামলা করেন। তার মুঠোফোন, পকেটে থাকা টাকা, আইডি ও পর্যবেক্ষক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করতে থাকেন। এ সময় অন্য সাংবাদিকরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রের ভেতর আশ্রয় নিলে সেখানেও তাদের মারধরের জন্য তেড়ে যান মনিরুল হক, তার ভাই ইকবাল হকসহ তাদের লোকজন। সাংবাদিকদের হত্যা ও হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেন তারা।

একই দিন হোসেন্দী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারেন মনিরুল হকের লোকজন। পুলিশ বাধা দিলে ককটেল ফাটিয়ে ও তাদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন মনিরুল হক গং। এ সময় পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে তারা। এ ঘটনার পর দিন বৃহস্পতিবার পুলিশ এবং সাংবাদিক গোলজার হোসেন আলাদাভাবে বাদী হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হককে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা করেন। এ দুটি মামলায় ২১৮ জনকে আসামি করা হয়।

পরে ১১ মে রাত ৯টার দিকে ঢাকার শাহজাহানপুরের একটি বাড়ি থেকে মনিরুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ১২ মে দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। পরে শুনানি শেষে এক দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন গজারিয়ার আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তার।

এদিকে পুলিশ ও সাংবাদিকের দুই মামলায় শুধু ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় এবং ইকবাল হককে আইনের আওতায় না আনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন মুন্সীগঞ্জের সংবাদকর্মীরা।

সংবাদকর্মীদের দাবি ইকবাল হক একজন সরকারি কর্মকর্তা। তবে তিনি এবং তার ভাই-বোনেরা প্রতিটি নির্বাচনে তাদের এলাকার কেন্দ্রগুলো দখল করে জাল ভোট দেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। গত ইউপি নির্বাচনের সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ইকবাল হক। সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় কোনোরকম ব্যবস্থা ছাড়াই বহাল তবিয়তে থাকেন তিনি। এবার উপজেলা নির্বাচনের ঘটনায় তাকে আসামি করা এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান সাংবাদিকরা।

এ ব্যাপারে গজারিয়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রাজিব খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই মামলাটি তদন্ত করবেন।

তবে মামলা তদন্তের বিষয়টি অস্বীকার করে মুন্সীগঞ্জ ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ বলেন, আমরা মামলা তদন্তের কোনো দায়িত্বভার পাইনি।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আসলাম খান বলেন, পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।

ব.ম শামীম/এমজেইউ