কুমিল্লায় পৃথক দুটি মামলায় দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক রোজিনা খান এবং চতুর্থ আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এসব রায় দেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দেবিদ্বারে আকামা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বে প্রবাসীর মাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে আল আমিন নামের এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড, একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আল আমিন দেবিদ্বার উপজেলার ভিংলা বাড়ি এলাকার সাজু মিয়ার ছেলে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রেবেকা সুলতানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, দেবিদ্বার উপজেলার ভিংলা বাড়ি এলাকার মৃত হাবীবুর রহমানের দুই ছেলে ফেরদৌস ও দুলাল দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে থাকেন। তাদের প্রতিবেশী আব্দুস সামাদ ডাক্তারের ছেলে মারুফকে সৌদি আরবে নেন ফেরদৌস ও দুলাল। পরে মারুফের আকামা না হওয়ায় দুলাল ও ফেরদৌসের বৃদ্ধ মাকে বাড়িতে এসে আকামা করে না দিলে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন সামাদ ডাক্তারের অপর দুই ছেলে মামুন ও মোস্তাফিজ। পরে ২০১০ সালের ৩ মার্চ রাতে দুলাল ও ফেরদৌসের মা আনোয়ারা বেগমকে একা ঘরে পেয়ে কৌশলে ঘরে ঢুকে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ভাড়াটিয়া আল আমিন। পরে নিহত আনোয়ারার মেয়ে (দুলাল ও ফেরদৌসের বোন) উম্মে সালমা বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই মামলায় আল আমিনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত আজ তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত আল আমিন পলাতক রয়েছেন।

অপর একটি মামলায় জেলার বরুড়া উপজেলায় বই ও কসমেটিকস বিক্রেতা মো. আক্তারুজ্জামানকে লাকড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার দায়ে হাফেজা বেগম তাসমিহা নামের নারীকে মৃত্যুদণ্ড এবং তার স্বামী শাহীন ভূইয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক রোজিনা খান এ রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত হাফেজা বেগম তাসমিহা বরুড়া উপজেলার বড় লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের মেয়ে এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শাহীন তাসমিহার স্বামী ও একই এলাকার রুহুল আমিনের ছেলে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার বরাতে আইনজীবী জানান, উপজেলার বড় লক্ষ্মীপুর এলাকার প্রবাসী শাহীন ভূইয়ার স্ত্রী হাফেজা বেগম তাসমিহার দিকে কুনজরে তাকাতেন তাদের প্রতিবেশী কসমেটিকস ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর রাতে প্রবাসফেরত শাহীনের স্ত্রী তাসমিহাকে একা ঘরে পেয়ে তার সর্বনাশ করার চেষ্টা করেন আক্তারুজ্জামান। এ সময় তার হাত থেকে রক্ষা পেতে তাসমিহা কাঠের লাকড়ি দিয়ে আক্তারুজ্জামানের মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। শাহীন রাতে ঘরে এসে এ দৃশ্য দেখতে পান। এ সময় স্ত্রী তাসমিহা পুরো ঘটনার বিবরণ দেন স্বামীর কাছে। পরে স্ত্রী এবং স্বামী মিলে মরদেহ পুকুরের পানিতে ফেলে চাপা দিয়ে রাখেন। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আবুল কাশেম বাদী হয়ে বরুড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা বরুড়া থানা পুলিশের তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তুললে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই মামলার রায়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে হাফেজা বেগম তাসমিহাকে মৃত্যুদণ্ড এবং তার স্বামী শাহিন ভূইয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।  

আরিফ আজগর/এমজেইউ