ফেলে দেওয়া পলিথিন পুড়িয়ে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদন করছেন বরগুনার আনোয়ার হোসেন নামের এক যুবক। উৎপাদিত ওই পেট্রোলেই চলে তার নিজের মোটরসাইকেল। স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও সহযোগিতা পেলে নিজের চাহিদা মিটিয়ে এ জ্বালানি তেল বাজারজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে আনোয়ারের। 

বরগুনা পৌরশহরের কাছেই ৬নং বুড়ির চর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সোনাখালী মাইঠা নামক এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। পেশায় তিনি একজন পৌরসভার চুক্তিভিত্তিক ট্রাকচালক। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন এলাকার জমানো ময়লা ট্রাকে করে পৌরসভার নির্ধারিত জায়গায় ফেলেন তিনি। পরে সেখান থেকেই বিভিন্ন ধরনের পলিথিন সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর সংগ্রহ করা ওই পলিথিনগুলো বিশেষ কায়দায় টিনের একটি ড্রামের মধ্যে ঢুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করেন পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল। ছোট পরিসরে আনোয়ার ১ কেজি পলিথিন পুড়িয়ে প্রায় ১.৫ লিটার জালানি তেল উৎপাদন করতে পারেন। আর এতে এখন তার খরচ হয় প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। তবে বড় আকারে এ কার্যক্রম শুরু করতে পারলে একই পরিমাণ তেল উৎপাদন করতে আনোয়ারের হিসেব অনুযায়ী খরচ হবে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

সরেজমিনে আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের সামনে একটি ছোট চুলায় পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরির সব কার্যক্রম চলছে। তেল উৎপাদন করতে প্রথমে ওই চুলার ওপরে একটি ছোট টিনের ড্রামে সংগ্রহকৃত পলিথিন ঢুকিয়ে ড্রামটির মুখ সম্পুর্ণভাবে বন্ধ করে দেন আনোয়ার। পরে কাঠের মাধ্যমে চুলায় আগুন জালিয়ে ড্রামটিতে তাপ দিতে থাকেন। অধিক তাপে একপর্যায়ে পলিথিন তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল গলে ড্রামের মধ্যে আলাদা হয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। এরপর ওই ড্রামের সঙ্গে লাগানো একটি পাইপের মাধ্যমে জলীয় বাষ্প বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। পরে পাইপের সঙ্গে লাগানো তিনটি পাত্রে জলীয় বাষ্পের সঙ্গে থাকা জালানি তেল, পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেলের ওজনের পার্থক্য অনুযায়ী আলাদা আলাদা হয়ে জমতে শুরু করে। 

 নামের আনোয়ার হোসেনের প্রতিবেশী নন্দ দুলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা যায় তা আমরা আগে কখনো দেখিনি। তবে আনোয়ার ভাই যে কাজটি শুরু করেছেন এটি একটি ভালো উদ্যোগ। উৎপাদিত তেল দিয়ে তিনি তার মোটরসাইকেল চালান। আমরা চাই তার এ কাজে সরকার তাকে সহযোগিতা করুক।

পলিথিন পুড়িয়ে তেল তৈরির এ উদ্যোগকে প্রথমে বিরক্তিকর মনে হলেও এখন সব ধরনের সহযোগিতা করেন আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী রুমা। দুজনে মিলে একত্রে কাজ করেন। রুমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমে যখন আমার স্বামী এ কাজ শুরু করেন তখন বিষয়টি আমার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়েছে। পরে যখন দেখলাম পলিথিন পুড়িয়ে তেল উৎপাদন হয় তখন আমার কাছে বিষয়টি ভালো লেগেছে। এছাড়া উৎপাদিত তেল দিয়ে তিনি তার নিজের মোটরসাইকেল চালান। সরকারিভাবে যদি একটু সহযোগিতা করা হয় তাহলে তার এ উদ্যোগটি তিনি আরও বড় আকারে করতে পারবেন। 

পরিত্যক্ত পলিথিন দিয়ে জালানি তেল উৎপাদনের বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাসার কাছেই পৌরসভার একটি নির্ধারিত জায়গায় শহরের সব ময়লা ফেলা হয়। এর মধ্যে অনেক ধরনের পলিথিন থাকে যা পরিবেশের ক্ষতি করে। ফেলে দেওয়া এ পলিথিনকে কাজে লাগিয়ে কী করা যায় সেই ভাবনা থেকে ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে শুরু করি। পরে বিভিন্ন কালারের পলিথিন নিয়ে প্রায় দুই থেকে তিন মাসের চেষ্টায় আমি তেল উৎপাদন করতে সক্ষম হই। উৎপাদিত তেল দিয়ে এখন আমার মোটরসাইকেল চালাই। তবে আমার এ কার্যক্রমকে যদি বড় আকারে করতে পারি তাহলে আরও বেশি তেল উৎপাদন করা যাবে। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমি চাই প্রতিদিন যে পলিথিনগুলো ময়লার সঙ্গে ফেলে দেওয়া হয় সেগুলোকে ব্যবহার করতে। এতে আমাদের পরিবেশের আর কোনো ক্ষতি হবে না। তবে আমার তেমন টাকা পয়সা না থাকায় ছোট আকারে তেল উৎপাদনের কাজ শুরু করেছি। বড় আকারে করতে ও বিশুদ্ধভাবে তেল উৎপাদন করতে আরও কিছু উপকরণসহ টাকার প্রয়োজন। এছাড়া নিরাপদ একটি জায়গা প্রয়োজন যেখানে পলিথিন পোড়ালে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। যদি এ কাজে কারো কোনো সহযোগিতা পাই তাহলে আমি বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে তেল উৎপাদনের কাজ শুরু করতে পারব।
 
বরগুনা বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিসিক থেকে আমরা যেসব বিষয়ে সহযোগিতা করি এর মধ্যে এটিও একটি। এর আগে পলিথিন পুড়িয়ে যেসব জায়গায় জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হয়েছে বিসিকের মাধ্যমে তাদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারও একজন শিল্প উদ্যোক্তা, তিনি যদি আমাদের থেকে প্লট বরাদ্দ অথবা ঋণের সহযোগিতা চায় তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে আবেদন করলে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। 

আব্দুল আলীম/আরকে