সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ফেরা এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান সাঈদ ঘরে ফিরেছেন। বুধবার (১৫ মে) বেলা ১১টায় নওগাঁ শহরের শাহী মসজিদ এলাকায় নিজ বাড়িতে নিরাপদে ফেরেন তিনি। এর আগে সকালে রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দরে নেমে স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাড়ি নওগাঁ শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হন এই প্রকৌশলী।

বর্তমানে আনন্দের জোয়ার বইছে এই প্রকৌশলীর বাড়িতে। সাইদুজ্জামান বাড়িতে ফেরার পর তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ বাবা কাইয়ুম ও মা কোহিনূর বেগম। ছেলে ফেরায় বৃদ্ধ মা নিজ হাতে রান্না করেছেন নানা পদের খাবার। এ যেন ঈদের মতোই খুশি বইছে তাদের পরিবারে।

তবে ঘরে ফিরেও জিম্মিদশার ভয়াল দৃশ্যগুলো এখনো আতকে তুলছে প্রকৌশলী সাইদুজ্জামানকে। সেইসব দিনের লোমহর্ষক বর্ণনা করতে গিয়ে ঢাকা পোস্টের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এএসএম সাইদুজ্জামান সাঈদ বলেন, দস্যুরা সব সময় একে-৪৭ এর মতো অস্ত্র তাক করে রাখত। ফাঁকা গুলি ছুড়েও ভীতি প্রদর্শন করত সোমালিয়ার দস্যুরা। সোমালিয়ার পুলিশদের সঙ্গে প্রায়ই বন্দুকযুদ্ধ জড়িয়ে পড়ত। তখন আরও বেশি ভয় পেতাম। প্রতি রাতে মনে হত এটাই বোধহয় জীবনের শেষ রাত। শেষ পর্যন্ত অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সরকারের সহযোগিতায় কোম্পানি আমাদের সুস্থভাবে মুক্ত করেছে।

তিনি আরও বলেন, দস্যুদের শেষ পর্যায়ে জাহাজ থেকে নেমে যাওয়ার মুহূর্ত আমাদের ২৩ জন নাবিকের কাছে ছিল স্মরণীয় মুহূর্ত, যা আমাদের নতুন করে বাঁচার আনন্দ দিয়েছে। এয়ারপোর্টে স্ত্রী আমাকে ফুল দিয়ে বরণ করেছে। ওইখানেই মিষ্টি খাওয়ানোর পর আমাকে বাড়িতে এনেছে। এখন ঘরে ফিরে অন্যরকম স্বস্তি পাচ্ছি। তবে জিম্মিদশার সেই দৃশ্যগুলো এখনো চোখের সামনে ভাসছে। ওই স্মৃতিগুলো ভুলতে পারলে তবেই স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ ফিরতে পারব।

সাইদুজ্জামানের স্ত্রী মান্না তাহরিন শতধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পহেলা বৈশাখে স্বামী মুক্তি পাওয়ার পর ওইদিনটা আমাদের কাছে ঈদের দিনের মতো মনে হয়েছে। এরপর থেকে অপেক্ষায় ছিলাম তার ঘরে ফেরার। পরে শুনলাম ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা বন্দরে পৌঁছে দিয়ে তবেই তারা ফিরবে। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে তাদেরকে বরণ করা হয়। এরপর আজ সকালে আমি তাকে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে আনতে যাই। অনেক দিন পর তাকে দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি জিম্মি করার পর সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জেফল উপকূলের কাছে নিয়ে যায় দস্যুরা। জাহাজটিতে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে ছিলেন নওগাঁ শহরের শাহী মসজিদ এলাকার প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান সাঈদ। ৩৩ দিন জিম্মিদশার পর মুক্তিপণের বিনিময়ে ২৩ জন নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি মুক্ত হয়।

এমজেইউ