লেনদেনের দ্বন্দ্ব
বেড়া পাউবোর একযোগে ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলির আবেদন
পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) কর্মরত ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে বদলি চেয়ে করা আবেদন ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। রহস্যজনক আবেদন প্রত্যাহার করতে অফিস ফাঁকা রেখেই নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৯ জন কর্মকর্তা দু'দিন ধরে অবস্থান করছেন ঢাকায়। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম।
অভিযোগ ও বেড়া পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়া, পওর বিভাগের বিভিন্ন প্রকার কাজ বুঝিয়ে দেওয়া-নেওয়া, সম্পন্ন করা এবং লেনদেন নিয়ে বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেই দ্বন্দ্বের জেরে গত ৯ মে স্বেচ্ছায় বদলি চেয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন ৩৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
বিজ্ঞাপন
আবেদনে তারা উল্লেখ করেন একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিব্রত, হয়রানি, মানসিক, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন মাধ্যমে নামে বেনামে মিথ্যা, হয়রানি ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত পত্র প্রেরণ করছেন। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা ধরনের বিব্রতকর জবাবদিহি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে কাজের পরিবেশ নেই দাবি করে স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করেন তারা। আবেদনের পরপরই নানা আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, আগে বদলি হওয়া কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের কাজ থেকে অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বর্তমান কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব দেখা হয়। সেই দ্বন্দ্বে নিজেদের সুবিধা আদায় করতে না পেরে একযোগে বদলির আবেদন করেন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা। এতে সকল পর্যায়ের কর্মচারীদের বাধ্য করেই বদলির আবেদনে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। কর্মচারীদের অনেকেই জানে না বদলির আবেদনে কি লেখা হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পর বদলির আবেদন প্রত্যাহার করতে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা মঙ্গলবার (১৪ মে) ঢাকাস্থ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে (বাপাউবো) যান। বুধবার বিকেল পর্যন্ত ফেরেননি তারা।
বুধবার (১৫ মে ) সকালে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর বিভাগে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অধিকাংশ কর্মকর্তার রুম তালাবদ্ধ। তবে তিনজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী অফিস করছেন। বেশিরভাগ কর্মচারীও অফিসে নেই। সাংবাদিকদের দেখেই তাদের ছুটাছুটি বেড়ে যায়। শীর্ষ কর্মকর্তারা না থাকায় এবং অফিস ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী ব্যতিত সকল কর্মকর্তা স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছেন। তবে একটা দপ্তরে কি এমন কাজ বা অভিযোগ যে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে অফিস সহায়ক কাজের পরিবেশ না থাকায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সেচ্ছায় অন্যত্র বদলির আবেদন করতে হলো। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
এ বিষয়ে উচ্চমান সহকারী রাকিবুল ইসলাম, তাউফিকুর রহমান ও অফিস সহায়ক মজিবুর রহমানসহ একাধিক কর্মচারী বলেন, স্যাররা আবেদনে স্বাক্ষর করতে বলায় আমরা স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু আবেদনে কি লেখা আছে বলতে পারি না। শুধু বলছে বদলির আবেদন করবে, স্বাক্ষর করবে, করে দিছি।
এ ব্যাপারে তিন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান, আব্দুল খালেক, হাবিবুর রহমান বলেন, স্যারদের অফিসিয়াল কাজ থাকায় তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। আবেদনের বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। স্যারের (নির্বাহী প্রকৌশলী) নির্দেশনা ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলা নিষেধ।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরীকে তার কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আর একই কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওসমান ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকারকে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বলেন, পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে জানিয়েছেন ঢাকায় একটি মিটিংয়ে যাবার কথা। কিন্তু ৯ জন একসঙ্গে ঢাকা যাবার বিষয়ে আমাকে কিছু জানায়নি। আর একযোগে ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলি চাওয়ার আবেদন ডিজি মহোদয় বরাবর দিয়েছে শুনেছি। কিন্তু অফিসিয়িালি কোনো ডকুমেন্ট এখনও পাইনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আমিরুল হক ভূঞা বলেন, আমি তো দেশের বাইরে ছিলাম। আজ সকালেই আসছি। বিষয়গুলো জানা নেই। দেশে আসছি মাত্র। এভাবে একসাথে সবাই ঢাকায় আসার তো কোনো সুযোগ নেই। গেলে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও ছুটি নিয়ে যেতে হবে। আর একযোগে সবাই বদলি হওয়ার সুযোগ কিভাবে আছে আমার তো জানা নেই। কি কি দরখাস্ত আসছে আগে দেখি। কেন দিয়েছে, কি কারণে সবগুলো দেখি আগে, তারপর বলা যাবে।
রাকিব হাসনাত/এমএএস