রাজমিস্ত্রির কাজ করে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন মমেজা বেগম
জীবন সংগ্রামে অদম্য লড়াকু এক মা মমেজা বেগম (৪০)। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করে একমাত্র ছেলেকে পড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজে শিক্ষার আলো না দেখলেও সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো মমেজা এখন এলাকাবাসীর কাছে অনুপ্রেরণা।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামী আর একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ছেলে মিলন সরকারকে পড়াচ্ছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার ছেলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়িয়া ইউনিয়নে ছোট্ট এক ঘরে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বসবাস করেন মমেজা বেগম। তার সঙ্গে তমিজ উদ্দিনের বিয়ে হয় ২০০০ সালে। পৈতৃক সূত্রে তজিম উদ্দিন অনেক জায়গা জমি পেয়েছিলেন। কিন্তু মমেজা বেগমের যখন তার সঙ্গে বিয়ে হয় তখন তার স্বামীর ১০০ শতাংশ সম্পত্তির মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ জমি অবশিষ্ট ছিল। মমেজা বেগম বিয়ের পর স্বামীর কোনো সম্পত্তিই ভোগ করতে পারেননি।
২০০৪ সালের শেষের দিকে তাদের সংসারে জন্ম হয় ছেলে মিলনের। ছেলের যখন তিন বছর বয়স তখন হঠাৎ তার স্বামী তমিজ প্যারালাইজড হয়ে যান। ৩ বছরের ছোট্ট লিমনকে নিয়ে শুরু হয় মমেজা বেগমের জীবন যুদ্ধ। সেই সময় মমেজার সংসারে দুটি গরু, কয়েকটা ছাগল, হাঁস মুরগি ও সামান্য জমি ছিল। স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাকে সব কিছু বিক্রি করতে হয়। তারপরও মমেজার স্বামী পুরোপুরি সুস্থ হননি। এখনো তার স্বামী ডান হাত ও বাম পা প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন।
স্বামীর চিকিৎসা ও সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাতে কখনো মানুষের বাসায় কখনো মানুষের খেতে কখনোবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন মমেজা বেগম। ১৬ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে তিনি হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে চলেছেন। প্রথমদিকে মমেজা যখন রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তখন সারাদিন কাজ করলে মজুরি পেতেন ১০০ টাকা।
মমেজা বলেন, লিমন যখন সেভেন কী এইটে পড়ে, সেই সময় মজুরি ছিল ১৫০ টাকা। ছেলে যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন ২০০ টাকার মতো মজুরি ছিল। আর এখন আমি প্রতিদিন ২৫০ টাকা মজুরি পাই। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই টাকায় কিছুই হয় না। রীতিমতো যুদ্ধ করে এই পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হচ্ছে। শুধুমাত্র ছেলেটাকে মানুষের মতো মানুষ করতে এত কষ্ট করতেছি।
তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে এইচএসসিতে বাসায় বসে পড়ালেখা করে কোনো কোচিং বা প্রাইভেট ছাড়াই জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল। সে বাসায় বসে প্রস্তুতি নিয়েই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। এসব কথা যখন মনে পড়ে তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি না। বলেই অঝরে কাঁদতে থাকেন মমেজা বেগম।
শত কষ্ট ও অসহায়ত্বের মাঝেও মা মমেজার একটাই আশা তার ছেলে পড়াশোনা শিখে খুব শীঘ্রই মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে।
বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বনি আমিন বলেন, সে খুব গরিব। কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ করে কখনো মানুষের খেতে কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া শেখাচ্ছে। তার ছেলে এখন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলার মরহুম খাদিমুল এমপির ছেলে মোহাম্মদ শাহেদ তাকে লেখাপড়ায় দেয় বলে শুনেছি। আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
আরিফ হাসান/আরকে