বাড়ির আঙিনার শাক-সবজি চাষ করেছি, হাঁস-মুরগি পালন করে ডিম বিক্রি এবং সেলাইয়ের কাজ করে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছি। মা দিবসে মেয়ের এসএসসি ফল প্রকাশ হয়েছে। আমার মেয়ে পাসও করেছে কিন্তু অভাবের সংসারে মেয়েকে মিষ্টি মুখ করাতে পারিনি। হঠাৎ এক স্যার আমার বাড়িতে এসেছেন মিষ্টি নিয়ে। স্যার যদি মিষ্টি  নিয়ে না আসতেন তাহলে মেয়েকে মিষ্টিমুখ করাতে পারতাম না।

কথাগুলো বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন সংগ্রামী মা তাসলিমা বেগম।

মা দিবস উপলক্ষ্যে রোববার (১২ মে) বিকেলে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের সরদার কান্দি গ্রামের মৃত দুলাল সরদারের স্ত্রী তাসলিমা বেগমের জীবন সংগ্রাম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট।

ঢাকা পোস্টে  ‘মেয়ে আজ যে সুসংবাদ দিয়েছে, তাতে আমি কষ্ট ভুলে গেছি’ শিরোনামে সংবাদ পড়ে রোববার রাতেই আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী শরীয়তপুরের জেলা কমান্ড্যান্ট মো. মইনুল ইসলাম মিষ্টি নিয়ে সংগ্রামী মা তাসলিমা বেগমের বাড়িতে যান।

তাসলিমা বেগম বলেন, সকালে ঢাকা পোস্টের এক সাংবাদিক এসে আমার জীবন সংগ্রামের গল্প শুনে যান। মেয়ে পাস করেছে কিন্তু ঘরে রান্না করার মতো ভালো মন্দ কিছু নেই। মেয়েকে মিষ্টিমুখ করাব কীভাবে? এমন সব কষ্টের কথা বলেছিলাম তাকে। এমন কত জনই তো আসল! কত কথা শুনল কিন্তু বাবা হারা চার সন্তান নিয়ে আমার কোনো গতি হয়নি আর হবেও না, এমনটাই ভেবেছিলাম আমি। কিন্তু হঠাৎ একটি প্রাইভেটকারযোগে এক স্যার এলেন। আমার কষ্টের কথা শুনলেন। আমার ভাঙা ঘর দেখলেন। এসময় তিনি আমার হাতে মিষ্টি তুলে দিয়েছেন মেয়েকে খাওয়ানোর জন্য। স্যার, মেয়েকে নতুন জামাসহ আমাকে নগদ টাকাও দিয়েছেন। এমন সাহায্য আমি আর কোনোদিন পাইনি।

তিনি বলেন, আমি চার সন্তান নিয়ে কষ্ট করেছি। কিন্তু একটা বিধবা ভাতার কার্ডও পাইনি। স্যার বলেছেন, মেয়ের কলেজের ভর্তির ব্যবস্থা করে দেবেন। আমার মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নেবেন। মা দিবস আজ। আমার মেয়ে এসএসসি পাস করেছে। এমন সুসংবাদে আমি সকল কষ্ট ভুলে গিয়েছিলাম। এমন আনন্দের দিনে আমি শুধু পুইশাক ও ডাল রান্না করেছি। স্যার মিষ্টি নিয়ে না আসলে মেয়েকে আমি মিষ্টিমুখ করাতে পারতাম না। স্যার নিজের হাতে আমার মেয়েকে মিষ্টি খাইয়েছেন। আমাকে বিধবা ভাতা কার্ড দেওয়ার জন্য সমাজসেবা অফিসারকে অনুরোধ করবেন বলেছেন। আমি একটু হলেও চিন্তা মুক্ত হলাম। স্যারের জন্য দোয়া করি। সাংবাদিকের জন্যও দোয়া করি। আমার সন্তানদের জন্য দোয়া চাই।

সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হাবিবা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলে, আমার বাবা নেই। সেই ছোটবেলায় বাবাকে দেখেছি। মা না খেয়ে আমাদের পড়াশোনা করিয়েছেন। আজ আমার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। বাড়িতে ভালো কিছু রান্নাও হয়নি। মিষ্টি খাব বা কাউকে খাওয়াব এমন চিন্তা একটু আগেও করিনি। হঠাৎ  আনসার বাহিনীর স্যার এসে আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছেন। আমার মনে হয়েছে আমার এই আনন্দের দিনে আমার বাবা এসে আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে আবার চলে গেছেন। চিন্তিত ছিলাম কলেজে ভর্তির টাকা পাবো কোথায়? কিন্তু স্যার আমার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন। আমি সকালে আপনাদের বলেছিলাম মাকে একটি ঘর বানিয়ে দেব। কিন্তু এখন বলছি, মাকে আমি একটি পাকা ঘর বানিয়ে দেব। স্যার আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি স্যারের জন্য দোয়া করি।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী শরীয়তপুরের জেলা কমান্ড্যান্ট মো. মইনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ সংবাদটি আমার নজরে পড়ে। পরে আমি খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম বাবাহারা চার সন্তান নিয়ে তাসলিমা বেগম খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। পরে আমি আমার অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে তাসলিমার মেয়ে হাবিবাকে মিষ্টি খাইয়েছি। হাবিবার কলেজের পড়াশোনার খরচ দেব। তার পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করব।

সাইফ রুদাদ/এসকেডি