ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে দুই দিন ধরে পড়ে থাকা নারী ও চিকিৎসাধীন দুই বছরের শিশুর পরিচয় মিলেছে। শিশুটির নাম মেহেদি হাসান। তার মায়ের নাম জায়েদা (৩২)। তিনি সিলেট সুনামগঞ্জ জেলার দুয়ারা উপজেলার খুশিউড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. রমিজ উদ্দিনের মেয়ে।

শনিবার (১১ মে) রাতে ভালুকা হাইওয়ে থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বাবুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ধারণা করা হচ্ছে, গত ৯ মে রাতে জায়েদা রাস্তা পার হতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

তিনি আরও জানান, নিহত জায়েদা ভালুকার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় শিশু জাহিদকে নিয়ে বসবাস করতেন। তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল কাপাশিয়ার বাসিন্দা ফারুক মিয়ার সঙ্গে। ফারুক স্থানীয় বাসিন্দা কফিল উদ্দিনের ছেলে। তার ঘরে প্রথম স্ত্রীসহ তিনটি সন্তান রয়েছে। এ কারণে তার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি পরিবার মেনে নেয়নি। ফলে জায়েদা স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় ভালুকার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

নিহত জায়েদার বড় ভাই মো. রবিন মিয়া বলেন, ফেসবুকে ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে আমরা ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি।

এর আগে, গত ৯ মে রাত ৩টার দিকে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় কোলের শিশুটিকে নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন মা জায়েদা। তিনি প্রাণ হারালেও বেঁচে যায় শিশু সন্তান। বর্তমানে শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ভোর রাতে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে অজ্ঞাত এক নারী ও শিশুকে গুরুতর আহত অবস্থায় নিয়ে আসে কয়েকজন ব্যক্তি। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলে পরদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়। নাম পরিচয় না পাওয়ায় মরদেহ রাখা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। এদিকে শিশুটি ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মাথায় এবং হাতে আঘাত রয়েছে।

এদিকে মা হারা এই শিশুটির চিৎকারে পরিবেশ ভারী হয়ে যায়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নেটিজেনরা আবেগতাড়িত হন এবং পরিচয় জানতে চেয়ে নিজেদের টাইমলাইনে পোস্ট করতে থাকেন।

২৬ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক ফারজানা কাওছার বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ফলে অবুঝ শিশুটি কান্নাকাটি করছে। তবে আমরা তার চিকিৎসা নিয়মিত মনিটরিং করছি।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আমরা নিয়মিত শিশুর খোঁজখবর নিচ্ছি। আল্লাহর রহমতে শিশুটি সুস্থ আছে। ওয়ার্ডে কর্মরত কর্মীরা তার দেখভাল করছে।

নিহত জায়েদা খাতুনের স্বামী ফারুক মিয়া বলেন, আমি পেশায় ট্রাকচালক। প্রায় ৭ আট বছর আগে জায়েদাকে দ্বিতীয় বিয়ে করি। তবে, পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়নি। এরপর থেকেই সে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতেন। আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পর আরও তিনটি বিয়ে করেছে বলে শুনেছি। এখন আমি প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় বসবাস করি। জায়েদা খাতুনও তার ছেলেকে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় বসবাস করতেন। তবে নির্দিষ্ট ঠিকানা আমার জানা নেই। গত এক মাসে আমার সাথে জায়েদার তিনবার দেখা হয়েছে।
ফারুক আরও বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি জায়েদা মারা গেছে। তাই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। তবে, সড়ক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মেহেদী হাসান আমার সন্তান না। জায়েদার পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে। তার ভাই সুনামগঞ্জ থেকে মরদেহ নিতে আসছে বলে জানতে পেরেছি।

উবায়দুল হক/এসকেডি