মনিরুল হক মিঠু

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুলিশ ও সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১১ মে ) রাত ৯টার দিকে ঢাকার শাহজাহানপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

এর আগে দুপুরে মিঠুসহ হামলার সঙ্গে জড়িতদের  গ্রেপ্তারের দাবিতে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা।

জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা নির্বাচনে গত ৮ মে  সকাল ৯টার দিকে হোসেনদি ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রভাব বিস্তার করতে কেন্দ্রের বাহিরে জড়ো হচ্ছিল কিছু লোক। এ সময় পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার শঙ্কায় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সবাইকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হকের নির্দেশে সোহেলকে মারধর শুরু করেন তার ভাতিজা তুরিন এবং তাদের লোকজন। এ সময় পাশ থেকে ছবি তুলছিলেন ও ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক গোলজার হোসেন। পরে তারা সোহেলকে রেখে গোলজারের ওপর হামলা করেন। তার মুঠোফোন, পকেটে থাকা টাকা, প্রেস আইডি ও পর্যবেক্ষেক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে মারধর করতে থাকেন। পরে অন্য সাংবাদিকরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে আশ্রয় নেন। সেখানে তাদের অবরুদ্ধ অবস্থায় মারধরের জন্য তেড়ে আসেন মনিরুল হক মিঠু ও তার লোকজন।

মারধরের ঘটনার পর কেন্দ্রের ভেতরে মনিরুল হক ও তার লোকজন প্রবেশ করার সময় সাংবাদিকদের হাত কেটে ফেলার হুমকি দেন। সেখানে মনিরুল হক হুংকার দিয়ে বলেন, দুই-চারজন সাংবাদিক মেরে ফেললে কী হবে? ওই দৃশ্য ভিডিও করতে গেলে মাইটিভির প্রতিনিধি শেখ মোহাম্মদ রতন  ও প্রথম আলোর প্রতিনিধি ফয়সাল হোসেনের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মনিরুল হক মিঠু ও তার লোকজন। পরে মারধরের শিকার সাংবাদিক গোলজার হোসেন সহকর্মীদের সহযোগিতায় গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।

পরে ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে মনিরুলের লোকজন নিয়ে ওই কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। তারা আনারস প্রতীকে সিল মারেন। এতে প্রায় ঘণ্টাখানেক ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। আবারও কেন্দ্রটি দখলের চেষ্টা করেন তারা। এ সময় ওই কেন্দ্রের দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) মো. বদিউজ্জামান এলে তার গাড়িও ভাঙচুর করেন মিঠুর লোকজন। ঘটনা শুনে কেন্দ্রের ভেতরে থাকা পুলিশ সদস্যরা বাইরে বেড়িয়ে এলে তাদের ওপর  ইট-পাটকেল, লাঠিসোঁটা, হাতবোমা নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পুনরায় ওই কেন্দ্রের দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন মিঠুর লোকজন। তাদের হামলায় সাদ্দাম (২৪) ও সোহাগ (২৫) নামে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। 

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে হোসেন্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মনিরুল হক মিঠু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী আমিরুল ইসলামের সমর্থক। এ মামলায় মো. মাসুম নামে মনিরুল হকের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে উপজেলার হোসেন্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুকে প্রধান আসামি করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন হামলার শিকার সাংবাদিক গোলজার হোসেন।  ওই মামলায়ও মনিরুল হক মিঠুকে প্রধান আসামি করা হয়। 

এ ব্যাপারে গজারিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজীব খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মনিরুল হক মিঠুকে ঢাকার শাহজাহানপুর এলাকা হতে গ্রেপ্তার করেছে গজারিয়া থানা পুলিশ।

ব.ম শামীম/আরএআর