সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান

লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তিনি পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদেরকে (মেম্বার) উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চুর (মোটরসাইকেল প্রতীক) পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

সম্প্রতি গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে জনপ্রতিনিধিদেরকে বাচ্চুর পক্ষে ভোট করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে রামগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচন হবে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইমতিয়াজ আরাফাত (আনারস প্রতীক) এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৭টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাও রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপির পিএস এলজিইডির কাবিটা প্রকল্পের বরাদ্দের লোভ দেখিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ওই প্রার্থীর জন্য ভোট চাচ্ছেন। এছাড়া নির্বাচনকালীন এলাকায় এমপিদের উপস্থিত থাকা নিয়ে বিধিনিষেধ থাকলেও আনোয়ার খান তা মানতে নারাজ। শনিবারের পর তিনি নিজ মালিকানাধীন আনোয়ার খান ডায়াগনস্টিক সেন্টার উদ্বোধন করতে তিন দিনের জন্য নির্বাচনী এলাকায় আসার কথা রয়েছে। মূলত মোটরসাইকেলের প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করতে আসবেন তিনি।

ইমতিয়াজের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এমপি আনোয়ার খান নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে পৌর মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদেরকে বাচ্চুর ভোট করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি এমপি এলজিইডির কাবিটা প্রকল্পের ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। ওই বরাদ্দের লোভ দেখিয়ে এমপি তার পিএস রফিককে দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে কল করে বাচ্চুর পক্ষে ভোট করার নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণবিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী এমপি যদি নির্বাচনী এলাকার ভোটার হন তাহলে শুধু ভোট দিতেই ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন। কিন্তু এমপি আনোয়ার খান তা অমান্য করে তিনদিনের জন্য ঢাকা থেকে রামগঞ্জে আসবেন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে নিয়ে নির্বাচনী সভা করার জন্য।

এদিকে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়েজ বক্স বাবুল (দোয়াত কলম)। তিনিও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলরসহ ১০ জন প্রতিনিধি জানান, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আগেই এমপি আনোয়ার খান জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে অনেকেই যাননি। যারা গিয়েছেন তাদেরকে দেওয়ান বাচ্চুর পক্ষে ভোট করার নির্দেশ দিয়েছেন এমপি। সম্প্রতি তার পিএস রফিককে দিয়েও হোয়াটসঅ্যাপে কল করে বাচ্চুর পক্ষে ভোট করার জন্য নির্দেশ দেন। বাচ্চুর পক্ষে ভোট করলে কাবিটা প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানকে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মো. রফিক বলেন, আমি কোনো জনপ্রতিনিধিকে কল দিইনি। অভিযোগটি সত্য নয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা দত্ত জানান, অভিযোগটি পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর