শারীরিক উচ্চতার কারণে চাকরি না পাওয়া ইশরাত জাহান সুইটি রংপুরের পীরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রজাপতি প্রতীকে তিনি ভোট পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৭৪৯। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেহেনা বেগম পদ্মফুল প্রতীকে পেয়েছেন ১৪ হাজার ২৯৫ ভোট।

বুধবার (৮ মে) রাতে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফারুক আহম্মেদ।

ইশরাত জাহান সুইটি পীরগাছা উপজেলার অনন্তরাম গ্রামের ফারুক আহম্মেদের স্ত্রী। জন্মের পর পা বেঁকে যাওয়া এবং মাত্র তিন ফুট উচ্চতার কারণে চাকরি পাননি সুইটি। কারমাইকেল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর সমাজের গরিব অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে থাকেন।

দীর্ঘদিন ধরে বিন্দু রক্তদান সমাজসেবা সংগঠনের নেত্রী হিসেবে সমাজের গরিব-অসহায় মানুষের জন্য কাজ করছেন ইশরাত জাহান সুইটি। ব্যক্তিগত জীবনে সুইটি এক সন্তানের জননী। তার স্বামী ফারুক আহম্মেদও এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করছেন।

স্বামী-স্ত্রী মিলে সংগঠনের পক্ষ থেকে পীরগাছা উপজেলায় ১০ হাজারেরও অধিক অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে রক্তদান এবং উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ শতাধিক ক্যাম্পেইন করে প্রায় ১৫ হাজারের অধিক মানুষের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করেছেন। এ জন্য গোটা উপজেলাজুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সুইটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।

এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ে একাই বাজিমাত করেছেন ইশরাত জাহান সুইটি। একই পদে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ইশরাত জাহান সুইটির বিজয় নিয়ে গোটা উপজেলাজুড়েই চলছে আলোচনা। ভোট শেষে সবখানেই তাকে নিয়ে মেতে ওঠে সাধারণ মানুষ।

শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও শিক্ষাগত যোগ্যতা, সাংগঠনিক দক্ষতা আর মানবিক কার্যক্রমের কারণে ভোটাররা তাকে মূল্যায়ন করেছেন বলে দাবি সবার। স্থানীয়রা জানান, জীবনযুদ্ধে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে সুইটি ভোটযুদ্ধেও জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রতিদিন একা একা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছেন সুইটি। সাধারণ ভোটাররা তাকে শুধু সমর্থনই নয় বরং বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। কেউ কেউ নিজের খরচে সুইটির জন্য প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। তার অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা মাঠ চষে বেড়ালেও সর্বাধিক সাড়া পাওয়া সুইটি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৮২ হাজার ৪৫৪ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এটি পুরো উপজেলার সর্বোচ্চ প্রাপ্ত ভোট।

ইশরাত জাহান সুইটিকে নিয়ে গত ১ মে নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাড়া ফেলেছেন প্রতিবন্ধী সুইটি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়।

বিজয়ী হওয়ার পর ইশরাত জাহান সুইটি বলেন, এই বিজয় পীরগাছার জনগণের। প্রথমবার নির্বাচন করে মানুষের এত সাড়া পাব ভাবতে পারিনি। আমার মতো এত ভোট পীরগাছায় আর কোনো প্রার্থী পাননি। আপনাদের এই ঋণ কোনো দিন ভুলতে পারব না। আগামী দিনে যেন সবার আপদে-বিপদে পাশে থাকতে পারি, সে জন্য দোয়া ও পরামর্শ চাই।

এদিকে বুধবার (৮ মে) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ৪২ হাজার ৭৬৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ দোয়াত-কলম প্রতীকে পেয়েছেন ৪০ হাজার ৯৪৮ ভোট।

আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহ মো. শারেখ খন্দকার জয় মাইক প্রতীকে পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৪৩৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাহ মো. ফরহাদ হোসেন চশমা প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন  ৩২ হাজার ১২৩ ভোট।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফারুক আহম্মেদ জানান, পীরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আব্দুল্লাহ আল মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহ মো. শারেখ খন্দকার জয় এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইশরাত জাহান সুইটি বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছে। উপজেলার ১৪ প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ইশরাত জাহান সুইটি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর