শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম ইসমাইল হক। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর ইসমাইল হকের সমর্থনে বিজয় মিছিল বের করেন নসাশন ইউনিয়ন যুবদল সভাপতিসহ অন্যান্য সমর্থকরা। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার (৮ মে) রাতে নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর উপজেলার নসাশন ইউনিয়নের মাঝিরহাট এলাকা থেকে ডগ্রি বাজারে বিজয় মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে নসাশন ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী একেএম ইসমাইল হক পুনরায় নির্বাচিত হন। তার সমর্থনে নশাসন ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি নুরুজ্জামান হাওলাদার, বাবুল মোল্লা, সাবেক ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা মাহবুব ফকির, রতন মাস্টার, লিটন হাওলাদার, লিটন মাদবর ও হাবিব মাদবরসহ সমর্থকরা মাঝিরহাট বাজার থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে ডগ্রি বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। মিছিলটি ঘোড়া প্রতীকের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুন শিকদার ভিপি মোস্তফার সমর্থক ও নশাসন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় মিছিল থেকে দেলোয়ার তালুকদারের বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। 

সংঘর্ষে যুবদল সভাপতি নুরুজ্জামান হাওলাদার, চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদারসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে যুবদল সভাপতি নুরুজ্জামান হাওলাদারসহ দুইজনকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। আহত চেয়ারম্যান দেলোয়ার তালুকদার ও ইউপি সদস্য কাদির মুন্সীসহ তার সমর্থকরা ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সংঘর্ষের সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করেছে।

নশাসন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের স্ত্রী ডালিয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী দেলোয়ার হোসেন তালুকদার ভিপি মোস্তফার সমর্থক। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসমাইল হক বিজয়ী হওয়ার পরে নুরুজ্জামান হাওলাদার ও রতন মাস্টারসহ অন্যান্যরা বিজয় মিছিল বের করেন। ওই মিছিল থেকে আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। হামলায় চেয়ারম্যানসহ আমাদের পক্ষের কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ জন আহত হন। চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা বর্তমানে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চেয়ারম্যানের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আমরা এ ঘটনায় মামলা দায়ের করব।

বিষয়টি জানার জন্য যুবদল সভাপতি নুরুজ্জামান হাওলাদারের মোবাইলে কল করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যুবদল সভাপতি সেটি আপনার লেখার দরকার নেই। আমি ইসমাইল হকের সমর্থক এটা লিখুন। আমরা মিছিল নিয়ে ডগ্রী বাজার থেকে ঘুরে পেছন দিকে আসার পথে আমাদের মিছিলে হামলা করা হয়েছে। 

কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনী সব কার্যক্রমে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না উল্লেখ্য করে শরীয়তপুর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বিদ্যুৎ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নশাসন ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নির্বাচনী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, যদি এমন প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাতানো ও সাজানো এই নির্বাচনে বিএনপি ও এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নিতে পারেন না।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শরীয়তপুর পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছোড়াকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। নির্বাচনী কাজে ব্যস্ততার কারণে এখনো আটকদের নাম জানতে পারিনি। এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সাইফ রুদাদ/কেএ