কখনো তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) প্রধান নির্বাহী আবার কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। এমনকি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করে ঘুরতেন নগরীতে। সঙ্গে থাকতেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারাও। নাম শাকিল আহম্মেদ। ভারিক্কি কথাবার্তা আর গাম্ভীর্য দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি আসলে একজন দক্ষ প্রতারক। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী, সিটি কর্পোরেশনের স্টাফসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে এসব পরিচয় দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন ৫০ লাখেরও বেশি টাকা।

এসব বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করলে বরিশাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অভিযান চালিয়ে প্রতারক শাকিল আহম্মেদ গ্রেপ্তার করেছে। শাকিল পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব সুবিদখালী গ্রামের গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকার মিরপুরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। 

বুধবার (১ মে) দুপুরে বরিশাল মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান উপ-কমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার।

শাকিল আহম্মেদকে গ্রেপ্তারের পরপরই বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগকারীরা বলছেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা এই প্রতারককে লোক সংগ্রহ করে দিতেন। এমনকি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করাতে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করে শাকিল আহম্মেদকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন।

প্রতারণার শিকার তারিকুল ইসলাম বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ম্যানেজার হিসেবে আমি চাকরি করি। আমাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করতেন ডা. খন্দকার মনজুরুল ইসলাম শুভ। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা। ডা. খন্দকার মনজুরুল ইসলাম শুভ আমাকে এই শাকিল আহম্মেদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ডা. খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম শুভ আমাকে বলেছেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী হিসেবে শাকিল আহম্মেদ যোগ দেবেন। তার সঙ্গে চাকরির বিষয়ে আমাকে যোগাযোগ করতে বলেন। সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে করে ডা. খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম শুভ আর শাকিল আহম্মেদ ঘুরে বেড়াতেন। ওই ডাক্তারের কথায় শাকিল আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি চাকরির আশ্বাস দিয়ে প্রায় ৭২ হাজার টাকা নিয়েছেন। শাকিল আহম্মেদ একদিন কল করে বলেন, ‘তারিকুল তোমারতো চাকরি হয়ে গেছে। আনসারদের মিষ্টি খাওয়াতে ২ হাজার টাকা পাঠাও।’ কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আমি সিটি কর্পোরেশনে যোগাযোগ করতে গিয়ে জানতে পারি শাকিল আহম্মেদ একজন প্রতারক।

প্রতারণার শিকার আরেকজন কবির হোসেন সোহেল। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে বর্তমানে কর্মরত। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস আমাকে নিয়ে এই শাকিল আহম্মেদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। শাকিল আহম্মেদ নিজেকে ডিএস (ডিরেক্টরেট অফ স্পোর্টস) বলে পরিচয় দিতেন। কর্পোরেশনের কাজে তাকে সব ধরনের সহায়তা আমি করি। একপর্যায়ে অসুস্থতার কথা বলে আড়াই লাখ টাকা নেয় আমার কাছ থেকে। পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম শাকিল আহম্মেদ কোথাও চাকরি করেন না। অথচ তিনি নিজেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বড় বড় পদের কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন।

এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস ও ডা. খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম শুভর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কল রিসিভ করেননি।

বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা প্রতারককে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। এখন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার সঙ্গে যারা যারা জড়িত রয়েছেন তারা যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দায়িত্ব পালনকালে স্বপন কুমার দাস ও ডা. খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম শুভ নগর ভবনে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর