তীব্র গরমে নদী বেষ্টিত দক্ষিণের জেলা বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। চারিদিকে বিভিন্ন নদ-নদীতে অথৈ পানি থাকার পরেও বিশুদ্ধ পানির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই এই এলাকায়। ফলে বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে অনেকেই অতিমাত্রায় লবণ ও কাদাযুক্ত পুকুরের পানি পান করে আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগে।

সাগর মোহনায় পাথারঘাটা উপজেলার চারদিক ঘিরে বিভিন্ন নদ-নদীসহ পানির পর্যাপ্ত উৎস থাকলেও সুপেয় পানির নেই তেমন কোনো ব্যবস্থা। এতে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের। বিশেষ করে এ উপজেলার প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি এলাকায় রয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। এছাড়া এ উপজেলায় প্রায় ১৫ থেকে ২০টি এলাকায় রয়েছে মাঝারি ধরনের পানির সংকট। স্বাভাবিকভাবে পানিতে লবণের মাত্রা ৬০০ পিপিএম (প্রতি মিলিয়ন অংশ) পর্যন্ত থাকলে সে পানি খাবার উপযোগী ধরা হয়। তবে পাথরঘাটার ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণের মাত্রা রয়েছে প্রায় ৩ হাজার পিপিএম পর্যন্ত। এতে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি পেতে গভীর নলকূপ বসালেও লবণাক্ততার কারণে নলকূপগুলো কোনো কাজেই আসছে না। এছাড়া অনেক এলাকায় নলকূপ বসালেও কাদাযুক্ত পানি ওঠায় সে পানি কোনো কাজে ব্যবহারে করা যায় না। 

সরেজমিনে পাথরঘাটার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৈশাখের কাঠফাঁটা রোদে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির নলকূপ বা ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পানি সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। পৌরসভার ব্যবস্থাপানায় ও বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে কিছু পানির ফিল্টারের ব্যবস্থা করলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এতে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় হেঁটে হেঁটে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করেছেন অনেকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা সবসময়ই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিতে ভিড় লেগে থাকে প্রত্যেকটি পানির ফিল্টারে। একদিকে চাহিদার তুলনায় পানির ফিল্টার কম, অপরদিকে কাছাকাছি পানির ব্যবস্থা না থাকায় বাড়িতে নিয়ে মেপে পানি পান করতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের।

পাথরঘাটা পদ্মা নামক এলাকায় সিসিডিবির নির্মিত একটি মাত্র ফিল্টারের পানিতে চাহিদা মেটে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের। ফিল্টার থেকে পানি নিতে আসা ওই এলাকার বাসিন্দা রাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো নলকূপ বসানো যায় না। যদি কেউ বসায় তাহলে তা দিয়ে লবণ পানি ওঠে, খাওয়া যায় না। এই পদ্মা এলাকার বাহির চরে অনেকগুলো পরিবারের পানির জন্য মাত্র একটি ফিল্টার। এর সাঙ্গে সংযোগ দেওয়া পুকুরটিও ছোট হওয়ায় অনেক সময় শুকনো মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে আর পানি পাওয়া যায় না।

নুর আলম নামের আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো টিউবওয়েল বসানো যায় না। তারপরও যা আছে তা দিয়ে লবণ পানি ওঠে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি পানিও ধরে রাখা যায় না, পানি নষ্ট হয়ে যায়। এসব পানি খেলে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পরে। 

দুলাল নামের আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ৩০ ফুটের নিচে টিউবওয়েল বসাতে পারি না। এর নিচে বসাতে গেলে পাথর আটকে যায়। এ কারণে টিউবওয়েল বসালেও ভালো পানি পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে পুকুর কেটে, বৃষ্টি পানি ড্রাম ও কলসিতে ভরে রেখে আমরা ব্যবহার করি। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও থেকে যে সব পানির ফিল্টার দেওয়া হয় তা কিছুদিন পরে নষ্ট হয়ে যায়। পরে আর কেউ তা ঠিক করতেও আসে না। পানির ভোগান্তি আমাদের থেকেই যায়।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী রাইসুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনার ৬ টি উপজেলার মধ্যে পাথরঘাটার ভৌগোলিক অবস্থা একটু বিচিত্র ধরনের। এখানাকার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ পাথারঘাটা সদরেও গভীর নলকূপ বসানো যায় না। আমরা পরীক্ষামূলক কিছু নলকূপ বসিয়েছি তবে দেখা গেছে ১২শ থেকে ১৩শ ফুট গভীরে যাওয়ার পরেও পানির ভালো স্তর পাওয়া যায়নি। এ কারণে এসব উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বৃষ্টি পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে এগুলো পর্যাপ্ত না হওয়ায় পুকুর খনন করে পানি বিশুদ্ধ করে ব্যবহারের পাশাপাশি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাথরঘাটায় সুপেয় পানির দীর্ঘদিনের সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।

আব্দুল আলীম/আরকে