মেহেরপুরে এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি
টানা তীব্র তাপপ্রবাহে মেহেরপুরে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। দাবদাহে শিশু ও বয়স্ক মানুষ বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। পেটের পীড়া, ঠান্ডা জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, পানিশূন্যতা ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, বাড়ছে হিট স্ট্রোকের রোগীও। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় জেলার হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট।
গত কয়েকদিন ধরে মেহেরপুর জেলায় তাপমাত্রা ৪০ থেকে ডিগ্রির ওপরে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৩ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে। তীব্র তাপপ্রবাহে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, অনেক রোগী বেড না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে শুইয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগে গাঁদা গাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ড. সাজ্জাদ বলেন, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে ১ হাজার ৩১৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ২২৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত। ইতোমধ্যে ২১০ জন রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মেডিসিন ও গাইনি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৫০ জন নারী। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ২৪০ জন। ইতোমধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৫৫ জন শিশু। এ ছাড়া উন্নত চিকিৎসা নিতে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে ১০ জনকে। বাকিদের হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে ভর্তি হন ৩৫০ জন রোগী। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩১১ জন রোগী। এ ছাড়া মারা গেছেন ৬ জন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ড. আব্দুল্লাহ মারুফ বলেন, এক সপ্তাহে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ১১২ জন, নারী ১৪৬ জন ও পুরুষ ৯৪ জন। ভর্তিকৃত এসব রোগীরা অধিকাংশই চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রোগীদের মধ্যে বৃদ্ধ ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক আহসান হাবিব বলেন, গত এক সপ্তাহে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক রোগী।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ড. জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার বলেন, রৌদ্রের প্রখরতা আর অতিরিক্ত গরমে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকরা কাজ করছেন। বেডের সমস্যা থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট নেই। এই গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়াই উত্তম।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, গত কয়েকদিন থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
আকতারুজ্জামান/এএএ