রেলের ভাড়া বৃদ্ধি হয়নি, ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হয়েছে : রেলমন্ত্রী
রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেছেন, সবাই মনে করছে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু না রেলের ভাড়া বৃদ্ধি হয়নি, ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কিছুটা ভাড়া বাড়বে, তবে সব ক্ষেত্রে না। ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে আমাদের ভাড়া বাড়ছে না। যত দূরত্ব বাড়বে সেক্ষেত্রে কিছু কিছু ভাড়া বাড়বে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজবাড়ীর শহীদ খুশি রেলওয়ে মাঠে ষষ্ঠ শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
জিল্লুল হাকিম বলেন, বিএনপির আমলে রেল প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছিল। ফরিদপুরের রেললাইন তুলে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল, ভাটিপাড়ার রেললাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রেল থেকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের নামে লাখ লাখ দক্ষ শ্রমিকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থা যখন চলছিল রেলে, যখন মানুষ চড়তে চাইতো না, সেই সময় একটা ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হয়েছিল যাতে রেলে যাত্রী পাওয়া যায়। এখন রেলের সেই অবস্থা নেই, রেলে অনেক উন্নতি হয়েছে। আজকে ট্রেনে রাজবাড়ী থেকে ঢাকায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে যাওয়া যায়। আমি নিজেও ট্রেনে ঢাকা থেকে রাজবাড়ী এসেছি। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বর্তমানে ট্রেনের সার্ভিস নিয়ে আনন্দিত ও সন্তুষ্ট। এবার ঈদযাত্রায় বাংলাদেশ রেলওয়ে যে সার্ভিস দিয়েছে মানুষ তাতে সন্তুষ্ট। এবার ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় ছিল না, টিকিট কালোবাজারি ছিল না, যাত্রীরা এবার ভালোভাবেই যেতে পেরেছে। এই প্রথম যাত্রীরা রেলে আনন্দের সঙ্গে ঈদযাত্রা করতে পেরেছে।
রেলপথমন্ত্রী বলেন, আমরা রেলকে উন্নত করতে চাই। আপনারা জানেন যে রেলে ভাড়া বাড়ানোর কথা হয়েছিল। রেলে ভাড়া বাড়ানো হয় না প্রায় ২০ বছর। সব জিনিসের দাম বাড়ছে। বাসের ভাড়া বেড়েছে, কিন্তু রেলের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় নাই। শুধুমাত্র ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- এখন ভাড়া বাড়ানো যাবে না, তবে ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে পারো, এটাতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। আমরা আশা করি এইটুকু আপনারা মেনে নেবেন। আমি রেলমন্ত্রী হিসেবে আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে রেলকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান করতে চাই। আমরা রেকে কন্টেইনার সার্ভিস চালু করবো। এটা চালু হলে রেল লাভজনক হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে রেলের জায়গার ওপর প্রচুর দোকানপাট রয়েছে, যার কোনো হিসাব নেই। এইগুলা আমরা দ্রুত খুঁজে বের করছি। আমরা একটা তালিকা করব। তালিকা করে তাদের সাথে বসে ভাড়া আদায় করবো। যারা ভাড়া দেবে না তারা রেলের জায়গার ওপর দোকানপাট করতে পারবে না। আমি মনে করি এই রেলের জায়গার ওপর যাদের দোকানপাট রয়েছে তাদের থেকে ভাড়া আদায় করলে বাংলাদেশের মধ্যে রেলের কর্মচারীদের বেতনের জন্য রাজস্ব থেকে টাকা নিতে হবে না। এই টাকা দিয়েই আমরা সমস্ত কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করতে পারব।
জিল্লুল হাকিম বলেন, আপনারা জানেন রাজবাড়ীতে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় রেল কারখানা হবে ১০৫ একর জমির ওপর। এই কারখানা হলে রাজবাড়ীর প্রায় ৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। এই কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে। এছাড়াও রাজবাড়ীতে একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম হবে যেটার নকশা তৈরি হয়ে গেছে। এছাড়াও রাজবাড়ীতে রেলের ডিভিশন করা হবে। এর মধ্যে দিয়ে রাজবাড়ী জেলা আবার রেলের শহরে পরিণত হবে। এতে রাজবাড়ীর সৌন্দর্য ও রাজবাড়ীর মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি হবে।
রাজবাড়ী জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল মোরশেদ আরুজ, পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ, পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ তিতু প্রমুখ।
এ সময় রেলপথমন্ত্রীর স্ত্রী মিসেস সাঈদা হাকিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সিদ্ধার্থ ভৌমিক, গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দসহ দর্শনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরএআর