ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, ফরিদপুরের মধুখালীতে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা অসৎ উদ্দেশ্যে ঘটিয়েছে। নিহতরা এ অসৎ উদ্দেশ্যের চক্রান্তের শিকার হয়েছেন।

শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা সামাজিক সম্প্রীতি কমিটির জরুরি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

ধর্মমন্ত্রী বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে তা আশা করা যায় না, বিশ্বাস করা যায় না, চিন্তা করা যায় না। ইতোমধ্যে প্রশাসন ও পুলিশ এ ঘটনায় জোরালো ভূমিকা নিয়েছে।  এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। ন্যায়বিচার হবে। দোষীরা শনাক্ত হলে এবং মামলাগুলো তদন্ত করার কাজ শেষ হলে দ্রুত বিচার আইনে বিচার করা হবে।

ধর্মমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে তার ফোনালাপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মধুখালীর এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  নিজেও অত্যন্ত ব্যথিত, কষ্ট পেয়েছেন। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারকার্য সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ফরিদুল হক খান আলেম সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ ঘটনায় আলেম সমাজ যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে। এ পরিস্থিতি টিকিয়ে রাখতে হবে।

সভায় ফরিদপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, আপনজন হারানোর বেদনা টাকা দিয়ে উপশম করা যায় না। তবে এ জাতীয় ঘটনা আর যাতে না ঘটে এ জন্য আমাদের সকলকে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, ফরিদপুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জায়গা। এ ঘটনায় ফরিদপুরে কলঙ্কের যে দাগ পড়েছে, সঠিক বিচারের মাধ্যমে সে কলঙ্ক ঘোচাতে হবে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। তদন্ত নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে গুজবে কিংবা কান কথায় কান না দিয়ে সরাসরি তার সাথে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল হামিদ জমাদ্দার, অধ্যাপক ও প্রবীণ সাংবাদিক মো. শাহজাহান, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদা বেগম, জেলা ইমাম কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ কাইয়ুম,সাবজাননেসা মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হুসাইন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথ, নারী নেত্রী আসমা আক্তার প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, এ ঘটনায় যে দুই জন নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এক লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে দুপুরে ধর্মমন্ত্রী মধুখালীর নওপাড়া ইউনিয়নের চোপের ঘাট গ্রামে হামলায় নিহত দুই ভাইয়ের বাড়িতে যান। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এরপর ধর্মমন্ত্রী পঞ্চপল্লী গ্রামে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক উপস্থিত ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী সর্বজনীন কালীমন্দিরে কালি প্রতিমার সারিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর হামলায় চারজন আহত হন। পরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই ভাই আশরাফুল খান (২০) ও আসাদুল খানের (১৮) মৃত্যু হয়।

তিন মামলা

এদিকে পঞ্চপল্লী গ্রামে মন্দিরে কালি প্রতিমার সারিতে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে মধুখালী থানায় এ মামলা তিনটি নথিভুক্ত করা হয়।

একটি মামলার বাদী পঞ্চপল্লী সর্বজনীন কালীমন্দিরের পূজারী কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষ চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী তপতী রানী মণ্ডল (৪৭)। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে কে বা কারা ওই মন্দিরে কালীপ্রতীমার পরনের শাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় তিনি ওই মামলা করেন।

দ্বিতীয় মামলার বাদী হামলায় নিহত দুই সহোদর আশরাফুল খান ও আসাদুল খানের বাবা মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের মো. শাহজাহান খান (৪৬)। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

তৃতীয় মামলাটির বাদী মধুখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শংকর বালা। এ মামলায় ওই থানার ওসিসহ ১০ জন পুলিশ সদস্যকে আহত করা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় আসামি হিসেবে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি মধুখালী ও বালিয়াকান্দির অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।

মধুখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন জানান, এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ১০ জনকে থানায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জহির হোসেন/আরএআর