চুয়াডাঙ্গায় দুজনের মৃত্যু ‘হিট স্ট্রোকে’ নয় : চিকিৎসক
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় আজ সকালে ও বিকেলে জাকির হোসেন (৪৪) ও মর্জিনা খাতুন (৫৫) নামে দুজন নারী-পুরুষ মারা গেছেন, যাদের মৃত্যু ‘হিট স্ট্রোকে’ হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন ওই দুজনের হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর সম্ভাবনা কম। অন্য কোনো কারণে তাদের মৃত্যু হতে পারে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জাকির হোসেন এবং বিকেল ৩টার দিকে মর্জিনা খাতুনের মৃত্যু হয়।
বিজ্ঞাপন
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. মহিবুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, ওই দুজনের মৃত্যু হিট স্ট্রোকে হয়নি।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। দুজনের কেউই হিট স্ট্রোকের কারণে মারা যাননি।
ডা. মো. মহিবুল্লাহ বলেন, আজ সকাল ৮টার আগে পরিবারের সদস্যরা মৃত অবস্থায় জাকির হোসেনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। হার্ট আ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যেতে পারেন। সাধারণত তাপমাত্রা ৪০ কিংবা তার অধিক হলে এং ওই সময় রোদে কাজ করলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। সকালবেলা হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
একই হাসপাতালে নিহত মর্জিনা খাতুনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিকেল ৪টার আগে মৃত অবস্থায় তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। তারা জানিয়েছেন সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে বুকে ব্যথা অনুভব করেন মর্জিনা খাতুন। ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে তাকে খাওয়ানো হয়েছিল। দুপুরের দিকে অতিরিক্ত অসুস্থ অনুভব করলে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। তিনি হিট স্ট্রোকে নয়, হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতে পারেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে হিট স্ট্রোকের কোনো সম্ভাবনা নেই।
নিহত জাকির হোসেন দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ালগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার আমির হোসেনের ছেলে। তিনি ঠাকুরপুর পীরপুর কুল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি ছিলেন।
জাকির হোসেনের বাবা আমির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে দীর্ঘ ৫-৬ বছর যাবত উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিল। গতকাল শুক্রবার রাতে প্রেশার বেড়ে যায়। সেই সময় মাথায় পানি দেওয়াসহ ওষুধ খেলে সুস্থ হয় সে। সকালে ফজরের নামাজের পর তার ছেলেকে সঙ্গে করে পাশের জমিতে পাটের বীজ বুনছিল জাকির। কিছুক্ষণ পর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমার নাতি আমাদের জানালে তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাচ্ছিলাম। সেখানে পৌঁছানোর আগেই মারা যায় সে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি মার্টিন হীরক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু সকালে তাপমাত্রা কম থাকে, এ সময় হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি নেই। উনি যেহেতু উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন, ধারণা করা হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক কিংবা ব্রেন স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা সত্য। মানুষকে সতর্ক করতে হবে। তবে এমন কোনো সংবাদ পরিবেশন করা যাবে না যাতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার নিপা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এত সকালে যদি মৃত্যু হয় তাহলে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে, এটা বলা ঠিক হবে না। কারণ সেই সময় হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি খুবই কম থাকে।
এদিকে শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে তাপপ্রবাহ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান।
আফজালুল হক/আরএআর