গাইবান্ধার সাঘাটায় অনলাইনে জুয়া খেলতে গিয়ে ক্যামেরা বন্ধকের জেরে সম্রাট (১৭) নামে এক কিশোরকে খুন করেছে তার বন্ধু। পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রিত কোমলপানীয় পান করিয়ে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে তাকে হত্যা করা হয়। 

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাঘাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক। 

এর আগে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার পশ্চিতবাড়ী গ্রামের এক পুলিশ সদস্যের বসতবাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে সাঘাটা থানা পুলিশ। গত ১৭ এপ্রিল ওই বন্ধুর বাড়িতে ক্যামেরা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় কিশোর সম্রাট।

নিহত সম্রাট মুক্তিনগর ইউনিয়নের আফজাল হোসেনের ছেলে। এছাড়া অভিযুক্ত রিফাত (১৭) সাঘাটা উপজেলার পশ্চিম বাটি গ্রামের মিলন হাজারীর ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত সম্রাট এবং অভিযুক্ত রিফাত একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা দুজনে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সম্প্রতি অনলাইনে জুয়া খেলে হেরে যায় সম্রাট। সম্রাট তার ক্যামেরা বন্ধু রিফাতের কাছে ১০ হাজার টাকায় বন্ধক রাখে। কয়েকদিন পরে বন্ধু রিফাতের কাছে ক্যামেরা ফেরত নিতে যান সম্রাট। কিন্তু এ সময় সম্রাট জানতে পারেন রিফাত অনলাইনে জুয়া খেলে টাকা হেরে বন্ধক নেওয়া ক্যামেরা বগুড়ায় ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। পরে বন্ধক নেওয়া ক্যামেরা বিক্রি করা নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। 

এর জেরে গত ১৭ এপ্রিল পরিকল্পিতভাবে সম্রাটকে ক্যামেরা নিতে নিজ বাড়িতে ডাকে রিফাত। একইদিন বিকেলে সম্রাট বন্ধু রিফাতের বাড়িতে ক্যামেরা নিতে এসে নিখোঁজ হয়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলেকে না পেয়ে পর দিন (১৮ এপ্রিল) সাঘাটা  থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে সম্রাটের পরিবার। এতে রিফাতের ডাকে সম্রাট বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি বলে উল্লেখ করা হয়। পরে ওই জিডি মূলে গতকাল শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে জিজ্ঞাসাবাদের সম্রাটকে আটক করে সাঘাটা থানা পুলিশ। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বন্ধু সম্রাটকে খুন করে সেপটিক ট্যাংকে গুম করে রাখার কথা স্বীকার করে রিফাত। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন রাত ১টার দিকে পশ্চিতবাড়ী গ্রামের এক পুলিশ সদস্যের বসতবাড়ির পিছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে সম্রাটের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্ধক রাখা ক্যামেরা বিক্রি করা নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এক বন্ধু অপর বন্ধুকে হত্যা করে। অভিযুক্ত রিফাত পরিকল্পিতভাবে তার বন্ধু সম্রাটকে কোমলপানীয়র সঙ্গে ৭-৮টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রিত পানি পান করায়। যা খেয়ে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে সম্রাট। পরে ঘুমন্ত সম্রাটকে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয়। যা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। 

তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত রিফাতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

রিপন আকন্দ/আরএআর