যারা দুর্নীতি করে আমার যুদ্ধ এদের বিরুদ্ধে : ব্যারিস্টার সুমন
হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছেন, একটা খেলোয়াড় এক ম্যাচ ফুটবল খেলে পাঁচ হাজার টাকা পায়। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে খেলা করে রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে পায়ে বরফ লাগাতে হয়। প্রতিটি প্লেয়ার খেলতে গিয়ে যে পরিমাণ লাথালাথি খায়, শুধুমাত্র আপনাদের আনন্দ দেওয়ার জন্যই। আর দুঃখ লাগে এদেশে ঘাম ফালাইয়া আমরা পাঁচ হাজার টাকা পাই আর ওরা এসি রুমের মধ্যে ঢুকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে। আমার যুদ্ধ এদের বিরুদ্ধে। আমার যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বানাতে গিয়ে যারা নিজের স্বার্থে টাকা-পয়সা লুটপাট করে ও দুর্নীতি করে এদের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বহরপুর রেলের মাঠে মাগুরা জেলা ফুটবল একাদশের সঙ্গে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ শেষে দর্শকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমি সাধারণ একটা পরিবার থেকে উঠে এসে আজকে ব্যারিস্টার হয়ে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে পাস করে এমপি হয়েছি। আজ আপনাদের মাটিতে ফুটবল খেলে এই তীব্র গরমে শরীর থেকে এক লিটার ঘাম ঝড়াইছি। আমি বিশ্বাস করি যে মাটিতে ঘাম পড়ে সে মাটির মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তা তৈরি হয়। আমি বিশ্বাস করি যে ঘাম দিয়ে গোসল করে সে ইতিহাস বদলাইতে পারে। আমি এমন একটা বাংলাদেশ দেখতে চাই যেটা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখতেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যেকটি উপজেলা থেকে ফুটবল প্লেয়ার বের করার চেষ্টা করছি। ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আজকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আমরা এখানে এসেছি। ফুটবলের উন্নয়নের জন্য যদি আমাদের ঘাম ঝরে তাহলে আমরা সার্থক। ফুটবলকে এরা একদম শেষ করে দিছে। এদের কাছ থেকে ফুটবলটাকে বাঁচানোর জন্য আমরা খেলি। আমরা আজকে মাগুরা টিমকে হারানোর জন্য এখানে আসি নাই। আমি আসছি হচ্ছে ফুটবলটাকে যারা নষ্ট করছে তাদেরকে হারানোর জন্য। আমরা আপনাদের সাথে আত্মীয়তা করতে আসছি। আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন। আমরা ফুটবলকে এগিয়ে নিতে চাই।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমার বয়স ৪৫। আজ দুইটা বাইসাইকেলে কিক দিছিলাম, কোমর ভাঙার ভয় করি নাই। আমি দেখছি আমার কোমর ভাঙলে ভাঙুক, তাও আপনাদের মন যেন না ভাঙে। এই জন্য উল্টা কিক মারছি। আমি মন যদি ভাঙতে চাই তাহলে তাদের মন ভাঙব, যারা ফুটবলটাকে নষ্ট করছে। আমি তাদের তাদের মন ভাঙতে চাই। আজকে নীলফামারীর এমপি সাহেব আসছে মাঠে খেলা দেখতে। আমরা কথা হচ্ছে আমরা যদি আস্তে আস্তে এমপি সাহেবদের মাঠে নামাতে পারি তাহলে এরপরে কিন্তু খেলা জমে যাবে। ফুটবল এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমি এমপি হিসেবে বেতন পাইছি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এছাড়াও এই তিন মাসে বরাদ্দ পাইছি ২৯ কোটি টাকা। আমি যা পাব সব জানাই দেব। আমার কথা হলো চেয়ার থাকলে থাকুক না থাকলে নাই। বাংলাদেশের মানুষ জানুক এমপি হলে কয় টাকা পাওয়া যায়।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, বর্তমানে ফুটবল আইসিইউয়ের মধ্যে চলে গেছে। এই ফুটবলটাকে টেনে নিয়ে আসার জন্য প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো জেলায় আমরা যাচ্ছি। আজকে রাজবাড়ীতে আমার দ্বিতীয় বার আসা। আজকে বালিয়াকান্দি এলাকার দর্শক ও প্রশাসনকে দেখে আমার খুবই ভালো লাগছে। তাদের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে কি পরিমাণ প্রেম ফুটবলের প্রতি তাদের। কিন্তু এই ফুটবলকেই আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলছি। এমপিদের সংখ্যা মাঠে যত বাড়বে, তত জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা বলতে পারব নেত্রী আমাদের ফুটবলের জন্য আরও কিছু বরাদ্দ দেন ও ভালো ভালো লোক নিয়ে আসেন। এটাই আমাদের প্রধান চাওয়া। আজ আমরা এই মাঠে দুইজন এমপি রয়েছি। আজ রেলমন্ত্রীর আসার কথা ছিল, তিনি আসতে পারেননি। তবে তিনিও ফুটবলের উন্নয়নের জন্য আমাদের সাথে রয়েছেন।
বহরপুর রেলের মাঠে প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে বহরপুর বি.এন.বি.এস আন্তঃজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটি। এ প্রীতি ফুটবল ম্যাচে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমির সাথে প্রতিপক্ষ হয়ে খেলে শক্তিশালী মাগুরা জেলা ফুটবল একাদশ। ব্যারিস্টার সুমন বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে মাঠে প্রবেশ করে ওয়ার্ম আপ শুরু করেন এবং দর্শকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে বিকেল ৫টার দিকে খেলা শুরু হয়। খেলার প্রথমার্ধে ২৬ মিনিটে মাগুরা জেলা গোল দিয়ে এগিয়ে যায়। পরে খেলার দ্বিতীয়ার্ধে ৪০ মিনিটের মাঝে আবারও মাগুরা জেলা আরও একটি গোল দিয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে নেই। পরে নির্ধারিত সময়ের শেষের দিকে ৬০ মিনিটের মাথায় ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি মাগুরা জেলা ফুটবল একাদশের জালে গোল দিয়ে ব্যবধান কমায়। পরে নির্ধারিত সময় শেষে মাগুরা জেলা ফুটবল একাদশ ২-১ গোলে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমিকে পরাজিত করে। এ খেলা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ফুটবলপ্রেমী দর্শকরা ছুটে আছে। তীব্র তাপদাহে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে তারা ব্যারিস্টার সুমনকে একনজর দেখতে ছুটে আসেন। এই খেলায় প্রায় ৩০ হাজার লোকের সমাগম হয়।
এ সয়ম নিলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাদ্দাম হোসেন পাভেল, বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন, বি.এন.বি.এস আন্তঃজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী শহিদুল ইসলাম (সাহিদ), সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরএআর