ফরিদপুরের সালথায় এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্য দফায় দফায় সংঘর্ষ ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২০ জনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আহতদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারী (৬৯) আহাদ ব্যাপারী (৩২), শাখাওয়াত ব্যাপারী (২৫), মজিদ ব্যাপারী (৩০), আলমগীর ফকির (৩৮), আজিজ মোল্যা (৪৭), বাসার মোল্যা (৫৫), হাসিবুল মোল্যা (২২), হানিফ মোল্যা (৪২), সেন্ট ব্যাপারী (৩১), ফরিদ মোল্যা (৫০), চানমিয়া শেখ (৪০), মনির মোল্যা (২৫), আকবর শেখ (৩২), হৃদয় মোল্যা (২০), আমরান মোল্যা (২৮), রেজাউল শেখ (৫০) ও সুমন মোল্যাসহ (৩৫) অন্তত ২০ জনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীরা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা ও নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, মাঝারদিয়া গ্রামে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহসভাপতি ও একই ইউপির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহিদুজ্জামান ওরফে সাহিদের বিরোধ চলে আসছিল। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে সাহিদ গ্রুপের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় ইউপি সদস্য কবির হোসেন ও  হাবিবুরের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন তার ছেলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন।

ওই দুই গ্রুপের মধ্যে চলমান বিরোধের জেরে শনিবার বিকেলে উভয় গ্রুপের কয়েক শ লোক দেশীয় অস্ত্র ঢাল, কাতরা, ভেলা ও টেটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পুরো এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ সংঘর্ষ। সংঘর্ষচলাকালে হাবিবুর রহমানের সমর্থক বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারী (৬৯) ও আজিজ মোল্যার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়। এ সময় মারপিট করে আহত করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারীকে। 

তবে সংঘর্ষের ঘটনায় এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। হাবিবুর রহমান হামিদের ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন বলেন, সাহিদ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। শনিবার বিকেলে সাহিদের সমর্থক ইউপি সদস্য কবির হোসেনের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারীর ওপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে তার পা জখম করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

তবে এ দাবিকে মিথ্যা বলে অপরপক্ষের নেতা ইউপি সদস্য কবির হোসেন বলেন, শনিবার বিকেলে ফারুকের সমর্থক বক্কর মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে আমার সমর্থক মনির ও সুমন মাঝারদিয়া বাজারে যাচ্ছিল। এ সময় বিনা কারণে তাদেরকে ধাওয়া দেয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফারুকের লোকজন। এ নিয়ে পরে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে আমার সমর্থক জালাল শিকদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রোববার বিকেল চারটার দিকে সালথা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফায়েজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৭ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এখনো কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জহির হোসেন/এএএ