বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না ট্রাকচালকরা
প্রতিবেশী দেশ ভারতে মহামারি করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়লেও দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে নেওয়া হয়নি তেমন কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেও ট্রাকে করা হয় না স্প্রে, চালকদের করা হয় না স্বাস্থ্য পরীক্ষা। অধিকাংশ চালকেরই মুখে মাস্ক নেই। ফলে ভিনদেশি ট্রাকচালকদের কারণে স্থলবন্দরে দিন দিন করোনার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে৷
সোমবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্বসহ সরকারি কোনো বিধি-নিষেধ না মেনেই এই স্থলবন্দর দিয়ে চলছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। দেশি-বিদেশি চালক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মুখে নেই মাস্ক। দু-একজন মাস্ক পরলেও বেশিরভাগ মানুষের মাস্ক থাকে থুতনি কিংবা পকেটে ৷
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে করোনা পরীক্ষা ছাড়াই অবাধে দেশে আসা-যাওয়া করছে ভারতীয় ট্রাক ও চালকরা। ফলে বন্দরে মালামাল নিয়ে যাতায়াতকারী ভিনদেশি চালকরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
জানা গেছে, করোনা সংকটকালেও সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্তে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবস্যা বাণিজ্য চালু রয়েছে। প্রতিদিন বন্দর দিয়ে কয়েকশ যানবাহন আসা যাওয়া করছে। ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আসা অধিকাংশ চালকের মুখে নেই মাস্ক, নেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাও। তারা খুব সহজে বন্দর এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন। হোটেল কিংবা খাবার দোকানে একসঙ্গে খাচ্ছেন। করোনার ভয় নেই তাদের মাঝে। বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের কোনো নজরদারিও নেই। বন্দরে দেশি-বিদেশি চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে না হওয়ার কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে দেশি-বিদেশি চালকরাও শঙ্কিত। তাদের দাবি- বন্দরের ভারতীয় অংশের কর্মকর্তারা করোনার বিষয়ে সচেতন থাকলেও বাংলাবান্ধা কর্তৃপক্ষ বেশ উদাসীন।
তবে চালকদের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বার বার তাগিদ দেয়া সত্যেও তারা মানছেন না বলে অভিযোগ বন্দর কর্তৃপক্ষের।
এদিকে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে এই বন্দর দিয়ে যারাই ফিরছেন তাদের স্বাস্থ্য ও করোনা পরীক্ষাসহ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করছে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত এক সপ্তাহে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছেন ৫৩ জন। পঞ্চগড়ে প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুজন রোগী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছেন ১৪ জন। তাদের মধ্যে তিনজন ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এ বিষয়ে ভারত থেকে আসা ট্রাকচালক গোবিন্দ রায় বলেন, আমরা ভারত থেকে যখন বাংলাবান্ধায় প্রবেশ করি তখন আামদের দেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও গাড়ি জীবাণুনাশক স্প্রে করা হলেও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে প্রবেশের পর কোনো পরীক্ষা করা হয় না। অনেকেই দেখছি মাস্ক না পরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে। নেই কোনো তদারকি। এখনি যদি সমস্যাগুলো সমাধান করা হয় তাহলে আমাদের সবার জন্য ভালো হবে।
একই কথা বলেন ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে আসা বাংলাদেশি ট্রাকচালক হামিদুর ইসলাম। তিনি বলেন, আমি বন্দরে এক সপ্তাহ ধরে আছি। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য খালাস করে আবার বাংলাদেশে ফিরে এসেছি। কিন্তু কোথাও কোনো ধরনের সতর্কতা দেখিনি। ভারতের গাড়িসহ চালকরা আসেন, কিন্তু কোনো পরীক্ষা করা হয় না। এতে তাদের পাশাপাশি আমরাও করোনার ঝুঁকির মধ্যে পড়ছি। কোনো বড় অফিসার আসলে লোক দেখানো স্প্রে নিয়ে বসে ২/৩ মিনিটের জন্য বিজিবির লোকজন দাঁড়িয়ে থাকে। আবার যখন অফিসার চলে যান তখন আগের মতো পরীক্ষা ছাড়াই ভারতের গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
এ বিষয়ে সেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত তেঁতুলিয়ার অন্যতম সদস্য ফেরদৌস আলম লিটন বলেন, বাংলাবান্ধা একটি চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও চালু রয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি সেখানে প্রশাসন কিংবা কর্তৃপক্ষের তেমন নজরদারি নেই। স্বাস্থ্য পরীক্ষা, গাড়িতে স্প্রে ও মাস্ক পরিধান করছেন না চালকরা। ফলে দিন দিন ঝুঁকিতে পড়ছে স্থলবন্দরসহ তেঁতুলিয়া উপজেলা।
এ বিষয়ে বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, লকডাউনের মধ্যেও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালু রয়েছে। তাই আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সমাজিক দূরত্ব বজায় দেখে কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছি। আমরা চালকদের সচেতন করেছি, মাস্ক বিতরণ করেছি, সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত মাইকিং করেছি।
অনেক সময় চালকরা এগুলো মানতে চান না। তবে যারা মাস্ক পরেন না তাদের আমরা মাস্ক পরতে বাধ্য করছি। যাদের মাস্ক নেই তাদের মাস্ক দিচ্ছি। যেহেতু ভারতে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে সেহেতু আমরা চালকদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, লকডাউনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালু রাখার রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্থলবন্দরে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি মানছেন না। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এছাড়াও অনেকেই মাস্ক পরছে না। এতে করে তারাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে অন্যদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। বন্দরের সবাইকে পুনরায় সতর্ক করা হবে। তারপরও কেউ যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো৷
রনি মিয়াজী/আরএআর