প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য গ্রামের বাড়িতে ছুটছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ফলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও যানজট ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে চলছে পাটুরিয়ামুখী যানবাহন।

অন্যদিকে পোশাক কারখানাগুলোয় ঈদের ছুটি হওয়ায় মহাসড়কসহ মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাট এলাকায় বেড়েছে ঘরমুখো যাত্রী। নৌপথে পর্যাপ্ত ফেরি আর যাত্রীবাহী লঞ্চ থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই নদী পার হয়ে যে যার গন্তব্য ছুটছেন। ঘাট এলাকায় ভোগান্তি না থাকলেও বেড়েছে যাত্রী ও যানবাহন।

সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো যাত্রীরা বিভিন্ন পরিবহনের বাসে করে সরাসরি পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটের দিকে যাচ্ছেন। আবার অনেকে লোকাল বাস, লেগুনা, ছোট ট্রাকে করেও যাচ্ছেন। অনেক যাত্রীই আবার মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নেমে আবার অন্য বাসে করে গন্তব্য ছুটছে।

কথা হয় মানিকগঞ্জের উথুলী এলাকার সেলিম মিয়ার (২৯) সঙ্গে। জীবিকার জন্য মুন্সীগঞ্জে থাকতে হয় তাকে। সেখানে এক্সাভেটরের (ভেকু) চালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, জীবিকার তাগিদে ওখানে থাকি বলে বাড়িতে তেমন আসা হয় না। বছরে দুই ঈদ ছাড়া দু-তিনবার বাড়ি আসা হয়। মুন্সীগঞ্জ থেকে মানিকগঞ্জ আসতে তেমন ভোগান্তি হয়নি, তবে এখন তো গাড়িই পাচ্ছি না। সব গাড়ি খালি পাটুরিয়া আর আরিচা যাচ্ছে। লোকাল যাত্রী তো নিচ্ছে না। আর লেগুনায় ৪০ টাকার ভাড়া চায় ৮০ টাকা।

আশুলিয়া থেকে বাসে করে পাটুরিয়া যাচ্ছেন সুমন হোসেনসহ আরও ৫০ জনের বেশি যাত্রী। আলাপকালে সুমন বলেন, পোশাক কারখানা ছুটি হইছে, সারা বছর তো গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়াতে যাওয়া হয় না। আর আমগো তেমন ছুটিও দেয় না। তাই খরচ কিছুটা বেশি হলেও ঈদে বাড়িতে যাই। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবার সড়কে ভোগান্তি নেই, আর শুনলাম ঘাটেও নাকি কোনো সমস্যা নেই। তাই এবার ভোগান্তি ছাড়াই ঈদ করতে বাড়িতে যাইতে পারবো বলে আশা করছি।

ঘাট সূত্রে জানা গেছে, সকালের দিকে ঘাট এলাকায় ছোট গাড়ি আর সাধারণ যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছিল। কিন্তু নৌবহরে ছোট বড় মিলে ১৫টি ফেরি এবং ২২টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করায় ঘাট পার হতে আসা এসব যানবাহন ও যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি হয়নি। ঘাটে আসার পর পরই ফেরিতে যানবাহন উঠে যাচ্ছে। দুপুরের দিকে ঘাট এলাকায় ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহন অনেক কম থাকলেও বিকেল সাড়ে ৪টার দিক থেকে ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। তবে এবারের ঈদযাত্রা পাটুরিয়া ঘাট হয়ে গ্রামের বাড়িতে ঘরমুখী মানুষ স্বস্তিতেই নৌপথ পারাপার হতে পারবে বলে আশা করছেন ঘাট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, টঙ্গী, আশুলিয়া, সাভার, নবীনগরসহ আশপাশের এলাকা থেকে যাত্রীরা বিভিন্ন পরিবহনের বাসে করে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের অদূরে এসে নামছেন। এরপর এসব যাত্রীরা লঞ্চঘাটে গিয়ে টিকিট নিয়ে লঞ্চে উঠছেন। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী যাতে পরিবহন না করা হয়, সে জন্য ঘাট এলাকায় নৌপুলিশ ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

আজকে সকাল থেকে লঞ্চের যাত্রী বাড়ছে বলে জানান পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার পান্না নন্দী লাল। তিনি বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রীবাহী ২০টি এবং আরিচা কাজিরহাট নৌপথে ১৩টি লঞ্চ চলাচল করছে। তবে পাটুরিয়ায় যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে গেলে দুটি লঞ্চ আরিচা থেকে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে আনা হবে। যাত্রীদের সংখ্যান বাড়লেও নৌপথ পারপারে কোনো ভোগান্তি নেই।

গোলড়া হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত (ওসি) সুকেন্দ সবু জনান, আজকে বিকেল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের অংশে পাটুরিয়ামুখী যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মহাসড়কে জেলা পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে, কোনো যানবাহন বিকল হয়ে গেলে কিংবা কোথাও যানজট তৈরি হলে দ্রুত সমাধানে কাজ করছে পুলিশ। তবে মহাসড়কে যানবাহনের জটলা না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ঘুরমখো মানুষ বাসে করে স্বস্তিতেই ঘাটে পৌঁছাতে পারছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, আজকে সকালের দিকে কিছু যানবাহন ঘাট এলাকায় ছিল, তবে ফেরি লোড-আনলোড করতে যে সময় লেগেছে ওই সময়ের মধ্যেই যানবাহনগুলো ফেরিতে উঠেছে এবং নৌপথ পার হয়েছে। পদ্মার তলদেশের বালু কেটে সরিয়ে দেওয়ায় ফেরি চলাচলের চ্যানেল সোজা হয়েছে। ফলে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ওপারের দৌলতদিয়া ঘাটে যেতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগছে ফেরিগুলোর। দুপুর থেকে ঘাট এলাকায় যানবাহন খুবই কম ছিল, কিন্তু বিকেলের দিকে যাত্রী ও যানবাহন বাড়তে থাকে। নৌবহরে আমাদের পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় ঘাট এলাকায় কোনো ভোগান্তি নেই। ঘরমুখো এসব যাত্রী ও যানবাহনগুলোকে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে নৌপথ পারের জন্য নৌবহরে ছোট বড় মিলে ১৫টি ফেরি চালাচল করছে। আশা করছি বৈরী কোনো আবহাওয়া না থাকলে মানুষ সহসাই ঘাট পার হতে পারবে। 

সোহেল হোসেন/আরএআর