মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড় এলাকায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে পুলিশের সামনে সোহরাব খান (৫৫) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দিঘীরপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত সোহরাব খান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মুলচার গ্রামের মৃত নুরু খানের ছেলে। দিঘীপাড়া বাজার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ঘটনায় সোহরাব খানের একমাত্র ছেলে গুরুতর আহত জনি খানকে (৩০) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায় , দিঘীরপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিয়েছে কয়েক‌শ বিক্ষুব্ধ জনতা। শতাধিক পুলিশও অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতাকে দিঘীরপাড় তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহ আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত সোহরাব খানের সঙ্গে টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে একই এলাকার ভোলা হাওলাদারের ছেলে  ইফতি ও রিহান গংদের বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে মঙ্গলবার বেলা‌ সাড়ে ১১টার দিকে দিঘীরপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহ আলম সোহরাব খান ও তার ছেলে জনি খানকে ডেকে আনেন। সোহরাব খান এবং জনি খান তদন্ত কেন্দ্রের সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শাহ আলমের সামনে তাকে ও তার ছেলেকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ইফতি ও রিহান গংরা।  পরে তাদের উদ্ধার করে টংগিবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহরাব খানকে মৃত ঘোষণা করেন এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় জনি খানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা বিকেল ৩টা পর্যন্ত দিঘীরপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহ আলমকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ কয়েকশ জনতা ওই তদন্ত কেন্দ্রের চারপাশে অবস্থান নেয়।

পরে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) তোফায়েল হোসেন সরকার বিকেল ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়ে উপস্থিত জনতাকে আশ্বস্ত করলে বিক্ষুব্ধ জনতা এ সময় তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহ আলমের বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয় এবং ইনচার্জ শাহ আলমকে তদন্ত কেন্দ্র থেকে যেতে দেবে না বলে বিক্ষুব্ধ জনতা জানায়। পরে পুলিশ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আশ্বাসে বিক্ষুব্ধ জনতা তদন্ত কেন্দ্র এলাকা ত্যাগ করে।

এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী সোহরাব খানের দোকানের কর্মচারী সেলিম সরকার বলেন, দিঘীরপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহ আলম সোহরাব খানের মোবাইলে ফোন করে তাকে তদন্ত কেন্দ্রে আসতে বলেন। এ সময় আমি ও তার ছেলে জনি খান সঙ্গে আসি। সোহরাব খান তদন্ত কেন্দ্রের সামনে আসা মাত্রই তদন্ত কেন্দ্র হতে বের হয়ে ইফতি ও রিহানসহ ১০/১২ জন সোহরাব খান ও জনি খানকে কোপাতে থাকে। আমি তাদের রক্ষা করতে গেলে আমাকেও কোপাতে আসে।

এ ব্যাপারে নিহত সোহরাব খানের ছোট ভাই মিজান খান বলেন, আমার ভাই ইফতি ও রিহানদের কাছে এক লাখ টাকা পেতেন। এ নিয়ে দুই দিন আগে আমার ভাই ও তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি সমাধান করার কথা বলে দিঘীরপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহ আলাম আমার ভাইকে ডেকে তদন্ত কেন্দ্রের সামনে আনেন। আমার ভাই তদন্ত কেন্দ্রের সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইফতি রিহানসহ ওরা ১০ থেকে ১২ জন আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে। আমার ভাতিজার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনার সঙ্গ দিঘীরপাড় তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহ আলম  জড়িত। শাহ আলম প্রথমে আমার ভাইকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। পরে ইফতি রিহানসহ ১০/১২ জন আমার ভাই ও ভাতিজাকে কুপিয়ে জখম করে। 

এ ব্যাপারে টংগিবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রণয় মান্না দাস বলেন, এ ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে আনার আগেই সোহরাব খান নামে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। গুরুতর আহত তার ছেলে জনি খানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) তোফায়েল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। এ ঘটনার সঙ্গে যদি কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকেও তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আইনের আওতায় আনা হবে। 

তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহ আলমকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন অবরুদ্ধ নয় তাকে আমরা সেফ জোনে রেখেছি। যেহেতু তার ওপরে জনতা কিছুটা ক্ষুদ্ধ রয়েছে।

ব.ম শামীম/আরএআর