নিজেদের ঘর আর অফিসার্স ক্লাবের বাহারি ইফতার রেখে উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে এতিমখানায় গিয়ে  ইফতার করছেন ইউএনও। নিজ কর্মস্থলের অধীনে সরকারি কর্মকর্তাদের উৎসাহীত করে মা-বাবাহীন এতিম শিশু কিশোরদের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসার এক অনন্য উদাহারণ তৈরি করেছেন গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিম উদ্দিন।

নবীজির আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে নিজ উদ্যোগে উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে তালিকা অনুযায়ী প্রতিদিন উপজেলার যেকোনো একটি এতিমখানায় নিজেদের অর্থায়নে এতিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাদামাটাভাবে ইফতার করেন তিনি। যেখানে দেশের বিভিন্ন উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজ বাংলোতে বিভিন্ন ধরনের বাহারি খাবার দিয়ে ইফতার করছেন। সেই সময়ে মা-বাবাহীন এতিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাদামাটাভাবে ইফতার করছেন কোটালিপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মাদরাসার এতিম শিক্ষার্থীরা যে খাবার দিয়ে ইফতার করছে সেই একই খাবার দিয়ে ইফতার করছেন ইউএনও। ইউএনওর এতিমদের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসার এমন ব্যতিক্রম ও মানবিক উদ্যোগের কারণে প্রশংসায় ভাসছেন উপজেলাবাসীর। 

জানা যায়, রমজানের শুরু থেকে নিজ উদ্যোগে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে শুরু করেন এতিমদের সাথে  এই  ব্যতিক্রম ও মানবিক ইফতার আয়োজনের। আর এই ইফতারে ইউএনওর জন্য আলাদাভাবে কোন স্পেশাল ইফতার থাকে না। মাদ্রাসা অন্য এতিম শিক্ষার্থীরা যে খাবার দিয়ে ইফতার করেন একই খাবার দিয়ে ইফতার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার সঙ্গীরা। 

প্রতিদিন বিকেল হলেই গাড়ি করে উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে এতিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতারের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন ইউএনও আজিম উদ্দিন। তালিকা অনুযায়ী উপজেলার নির্ধারিত যে কোনো একটি এতিমখানায় অফিসার্স ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সেখানকার শিক্ষকসহ এতিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। উপজেলার সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী কর্মকর্তার সঙ্গে সাদামাটাভাবে ইফতার করতে পেরে খুশি এতিম শিশুরাও।

উপজেলার পবনারপাড় মদীনাতুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানার প্রধান শিক্ষক মাওলানা রবিউল ইসলাম বলেন, যেখানে একজন ইউএনওর নিজ বাংলোতে বিভিন্ন ধরনের বাহারি ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসে থাকার কথা। সেই সময়ে মা-বাবাহীন এতিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাদামাটাভাবে ইফতার করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর রমজান মাসজুড়েই চলছে ইউএনওর এই ব্যতিক্রম ও মানবিক ইফতার আয়োজন। তালিকা অনুযায়ী প্রতিদিন উপজেলার যে কোনো একটি এতিমখানায় নিজ অর্থায়নে এতিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাদামাটাভাবে ইফতার করেন তিনি। তালিকা অনুযায়ী আজ আমাদের সঙ্গে ইফতার করছেন ইউএনও স্যার। তার সঙ্গে এক জায়গায় বসে ইফতার করতে পেরে আমরাও অনেক খুশি। আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে গর্ব করা যায়। 

জনতা ব্যাংক কোটালীপাড়া শাখার জেনারেল ম্যানেজার বলেন, এর আগে ওই উপজেলার কোনো ইউএনওকে এমন ব্যতিক্রমী কোনো আয়োজন করতে দেখিনি। সারাদিন রোজা রাখার পরে এতিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতার করা মানবিকতার সর্বোচ্চ উদাহরণ। এমন উদ্যোগ প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়াবে। পাশাপাশি পবিত্র এই রমজান মাস যে সংযম ও মানবতার তারই এক উদাহরণ। ইউএনওর এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। পাশাপাশি অন্য উপজেলার কর্মকর্তাদের জন্য উদাহরণ।

স্থানীয় রমজেদ শেখ এক নামে এক মুসল্লী বলেন, যেখানে উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা কেলেঙ্কারিতে ব্যস্ত। সেই সময় আমাদের ইউএনও স্যারের এতিমদের প্রতি ভালোবাসার এমন ব্যতিক্রম ও মানবিক উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে সত্যিই আমরা উপজেলাবাসী  গর্বিত।  

পবনারপাড় মদিনাতুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, পবিত্র এই রমজানে বাবা মা ছাড়া ছাড়া আমাদের ইফতার করতে হয়। মাঝেমধ্যে ভালো খাবার পাই। আবার মাঝে মধ্যে তাও পাই না। তবে আজ স্যারের সঙ্গে ইফতার করতে পেরে সব ভুলে গেছি। মনে হয়েছে বাসায় পরিবারে সঙ্গে ইফতার করছি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোটালিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নবী-রাসুল হযরত মোহাম্মদ সাঃ নিজেই এতিম ছিলেন। এবং তিনিই আল্লাহর সবচেয়ে পছন্দের মানুষ ছিলেন। এছাড়াও পবিত্র কোরআনে এতিমদের প্রতি ভালোবাসা ও তাদের হক আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এ কারণে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে আমার এই ছোট্ট আয়োজন। একদিনে তো আর সম্ভব নয় তাই প্রতিদিন তালিকা করে বিভিন্ন এতিমখানায় গিয়ে তাদের সঙ্গে একসাথে বসে ইফতার করছি। এতে আমি যে আত্মতৃপ্তিটা পাই। তা বাসার বাহারি ইফতারিতে পাই না। এছাড়া রমজানের আনন্দটাও একসঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারছি। 

তিনি আরও বলেন, আমি এই উপজেলায় আসার পর উপজেলা প্রতিটি এতিমখানার তালিকা করে সার্বক্ষণিক মাদরাসার শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি। যদিও আমরা সবাই বিভিন্ন দাপ্তরিক ব্যস্ততার কারণে তাদের সব সময় খবর নিতে পারি না তাই এই রমজানে এই আয়োজনের মধ্যে দিয়ে তাদের খোঁজখবর নিতে পারছি। যেদিন যে মাদরাসায় ইফতার করছি ওইদিন ওই মাদরাসার ইফতার খরচ আমরা নিজেরাই বহন করে থাকি। প্রথম রমজানে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে শেষ রমজান পর্যন্ত। 

এমএএস