হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত ছেলের গালে শেষ চুম্বন বাবার
সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে অস্বাভাবিক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফিরোজ আলী। তাকে চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত চিকিৎসকরা। এর মধ্যেই দুর্ঘটনায় নিহত তার ছয় মাস বয়সী ছেলে সন্তানের গালে চুম্বন দিয়ে শেষ বিদায় জানিয়েছেন বাবা ফিরোজ আলী। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে নওগাঁর মান্দা উপজেলায় পিকআপের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত হন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ আলী (৩৫), তার স্ত্রী রেশমা খাতুন (৩২) ও মেয়ে ফারিয়া (৮)। ঘটনাস্থলেই মারা যায় ফিরোজ আলীর ছয় মাস বয়সী ছেলে ফারাবি। ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে সপরিবারে গ্রামের বাড়ি পত্নীতলা উপজেলার চকগোছাই গ্রামে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে মান্দার বিজয়পুর এলাকায় তারা দুর্ঘটনার শিকার হন।
বিজ্ঞাপন
মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বিজয় কুমার রায় জানান, সড়ক দুর্ঘটনার পর তাদের প্রথমে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। এ ঘটনায় ফিরোজ হোসেন, তার স্ত্রী ও মেয়েকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাই আমরা। তবে ছেলে শিশুটিকে মৃত অবস্থায় আনা হয় হাসপাতালে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সময় হাসপাতালের একজন নার্সের সহযোগিতায় মৃত শিশুটিকে শেষবারের মতো চুম্বন করেন বাবা ফিরোজ হোসেন। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা সবাইকে অশ্রুসিক্ত করেছে। এমন দৃশ্য আমরা কোনোভাবেই ভুলতে পারছি না।
মান্দা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী জানান, ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে হেফাজতে নেওয়া হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা পরবর্তীতে জানতে পারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত শিশুটির মাও মৃত্যুবরণ করেছেন। আহত ফিরোজ আলী এবং তার মেয়ে ফারিয়া এখনো চিকিৎসাধীন।
এদিকে এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহউদ্দিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোছা. হাফিজা খাতুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে স্ত্রী-সন্তান হারিয়েছেন। এমন মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
আরমান হোসেন রুমন/আরএআর