চিড়া-খেজুরেই এতিমদের ইফতার
অধিকাংশ দিনই চিড়া অথবা ছোলা-মুড়ি আর খেজুর দিয়ে ইফতার করে চন্দ্রনীমহল ফজলুল উলুম রশিদীয়া মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের শিক্ষার্থীরা। কারণ নিজস্ব উদ্যোগে ভালো মানের ইফতার করানোর সামার্থ্য নেই মাদরাসা কর্তৃপক্ষের।
তাই কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা এলাকার কেউ সহযোগিতা দিলেই কেবল শিক্ষার্থীদের ভালো মানের ইফতার কপালে জোটে। প্রতিদিন এতিম ও অসহায় শিক্ষার্থীরা ভালো ইফতারের জন্য মানুষের সহযোগিতার অপেক্ষা থাকে।
বিজ্ঞাপন
এভাবেই রমজান মাসজুড়ে চলছে খুলনার দিঘলিয়ার চন্দ্রনীমহল ফজলুল উলুম রশিদীয়া মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের শিক্ষার্থীদের ইফতার।
ওই মাদরাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইকরামুল ইসলাম বলে, আমাদের এখানে যেদিন কেউ ইফতার দেয় সেদিন আয়োজন করতে সহজ হয়। আর যে দিন কেউ ইফতারি দেয় না সেদিন মাদরাসা থেকে সামান্য সামগ্রী দিয়ে ইফতার করানো হয়। এতে খুব কষ্ট হয়। আমরা অসহায়। ঠিতমতো খেতে পাই না। সবাই গরু-মুরগির মাংস, ফলমূল খায়। কিন্তু আমরা পাই না।
সে আরও বলে, অনেকে দেখি নতুন নতুন পোশাক পরে। কিন্তু এই এতিমখানায় আমাদের ছোট ছোট ভাইয়েরা পুরান কাপড় পরেই ঈদ পার করে। ওদের দেখলে খুব কষ্ট লাগে। এখানে কারও বাবা নেই, কারও মা নেই। এই যে ঈদ আসছে আমাদের অনেকেরই ভালো একটা স্যান্ডেল, জামা-কাপড় নেই। মাস জুড়ে একটা পাঞ্জাবি পরতে হয়। এভাবেই আমাদের দিন কাটে। কেউ সহযোগিতা করলে আমরা উপকৃত হই।
আরেক শিক্ষার্থী মো. আব্দুর রাকিব বলে, আমার আব্বু-আম্মু নেই। এক হুজুরের মাধ্যমে এই এতিমখানায় এসেছি। যেদিন কেউ ইফতার পাঠায় সেদিন ভালো খাওয়া-দাওয়া হয়। কিন্তু যেদিন ইফতার পাঠায় না সেদিন চিড়া আর খেজুর ম্যানেজ করে আমরা ইফতার করি। তখন আমাদের একটু কষ্ট হয়।
মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মাহামুদুল ইসলাম বলেন, এই মাদরাসা ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অঞ্চলের মিল-কলকারখানা বন্ধের পর মাদরাসার বেহাল অবস্থা হয়েছে। এখানে আবাসিক ও অনাবাসিক প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। যার মধ্যে আবাসিকে এতিম ও অসহায় প্রায় ৬০-৭০ জন রয়েছে। কিছু ছাত্র আছে যারা কিছুটা সামর্থ্যবান তারা বেতন দেয়। অধিকাংশ ছাত্র এখান ফ্রি থাকে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মাদরাসাটি চলছে।
তিনি আরও বলেন, মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকে মানুষ তেমন সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে না। আগে মানুষ নিজ উদ্যোগে খাবার খাওয়াতো। এখন লজিংয়েও কষ্ট হয়ে যায়।
রমজানে ইফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, ইফতার এলাকার মানুষের সহযোগিতায় চলে। কিন্তু সবদিন তো আর থাকে না। যেদিন ইফতার দিতে মানুষ নাম লেখায় ওইদিন মুটামুটি ভালো ইফতার হয়। অধিকাংশ দিনই থাকে না। সেদিন ব্যক্তিগতভাবে অল্প টাকায় চিড়া, চিনি আর খেজুর এক সঙ্গে মিশিয়ে সবাই মিলে ইফতার করি। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সেহরি ও ইফতার চলে।
আন-নাফি কল্যাণের পথে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালক এমএ সাদী বলেন, গ্রাম্য পরিবেশে এই মাদরাসাটি খুব সাধারণভাবে চলছে। আমরা প্রায় এই মাদরাসায় আসি। এখানে এতিম ও অসহায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। টাকা-পয়সা দেওয়ার মতো তাদের তেমন সামর্থ্য নেই। এখানে এসে অনেক সময় দেখেছি শুধু চিড়া, মুড়ি দিয়ে ইফতার করছে। এটি দেখার পরে কয়েকবার চেষ্টা করেছি ভালোমানের ইফতার দেওয়ার। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী দিচ্ছি। সেই সঙ্গে সমাজের বিত্তবান, সামাজিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনের কাছে আবেদন তারাও যেন এই মাদরাসায় আসেন এবং এতিম ও অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায় এবং মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
দিঘলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম বলেন, মাদরাসাটির শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় সবসময় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সম্প্রতি মাদরাসা ও মসজিদের উন্নয়নে এক লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে বিত্তবান মানুষেরা এতিম ও অসহায় শিশুদের পাশে থাকবে সেই প্রত্যাশা করছি।
আরকে