দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঘাট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

ঘাট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রী ও যানবাহনের চাপ আগের থেকে অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারপরও ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রস্তুতি রেখেছে। আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৫টি ছোট-বড় ফেরি সার্বক্ষণিক চলাচল করবে। এ ছাড়া যাত্রী পারাপারে ২০টি লঞ্চ নিয়োজিত থাকবে। সাতটি ঘাটের মধ্যে তিনটি ঘাট সচল থাকবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ৬ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল নদীতে বন্ধ থাকবে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল। এ ছাড়া দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা যানজটমুক্ত রাখতে ঈদের আগের তিন দিন ও ঈদের পরের তিন দিনসহ মোট সাত দিন পচনশীল ও জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ব্যতীত সকল ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পারাপার বন্ধ রাখা হবে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করা হবে ছোট গাড়ি, মাহিন্দ্রা, অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন। অন্যদিকে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাট এলাকার সড়কে আলোকসজ্জা, অস্থায়ী টয়লেট, মাতৃদুগ্ধ কেন্দ্রের পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য থাকবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসন্ন ঈদযাত্রাকে সামনে রেখে আমাদের বিআইডব্লিউটিসির যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট-বড় ১৩টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদকে সামনে রেখে আমরা আরও দুইটি ফেরি বৃদ্ধি করবো। আমাদের বহরে থাকা ১৫টি ফেরি দিয়ে আসন্ন ঈদযাত্রায় আমরা যাত্রীদের সেবা দেব। আশা করছি যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ করতে বাড়িতে যেতে পারবেন ও ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি.এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে জেলা পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও ঘাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিং করেছি। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় আমাদের চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা কাজ করবেন।

জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও আনন্দমুখর পরিবেশে করার জন্য সকলকে নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের আগের ও পরের তিন দিন জরুরি সেবা ব্যতীত সকল পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ৬ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। আশা করছি এবার সকলের সহযোগিতায় একটি উৎসবমুখর ঈদ উপহার দিতে পারবে। যাত্রী হয়রানি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি এবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এমজেইউ