সাদা টাইলসে মোড়ানো নান্দনিক মিনার। আছে দৃষ্টিনন্দন শাহী গেট। মিনার থেকে প্রধান ফটক পর্যন্ত কারুকার্য যেন একটি থেকে আরেকটি উচ্চতর। রয়েছে সুসজ্জিত বাগান, যেখানে দেখা মিলবে শোভাবর্ধনকারী দেশি-বিদেশি নানা উদ্ভিদের। ভেতরে রয়েছে আলো ঝলমলে লাইটিং ব্যবস্থা। কৃত্রিম কারুকার্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিশেল ঘটিয়েছে খুলনার ঐতিহ্যবাহী তালাবওয়ালা জামে মসজিদ।

১৯৬৭ সালে খুলনা মহানগরীর মুসলমানপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদরাসা’। এই মাদরাসার দৃষ্টিনন্দন মসজিদ তালাবওয়ালা জামে মসজিদ। আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.)-এর অনুপ্রেরণায় বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম হাজী আবদুল হাকিম জমাদ্দারের পৃষ্ঠপোষকতায় মাওলানা মুজিবুর রহমান (রহ.) এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মসজিদের নির্মাণকাজ, নির্মাণশৈলী এবং চারপাশের পরিবেশের জন্য দর্শনার্থীদের কাছে বিখ্যাত। ফলে দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এখানে নামাজ পড়তে আসেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক শেখ দিদারুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মসজিদটি খুলনার ইতিহাসের সাক্ষী। যুগ যুগ ধরে এই মাদরাসা ও মসজিদটি ইসলামের আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা আসেন এই মসজিদে। বিশেষ করে মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসাটি বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাদরাসা। এই মাদরাসায় যারা লেখাপড়া করে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা। এই মাদরাসা খুলনা অঞ্চলের আলেম-ওলামা সৃষ্টিতে অবদান রেখে চলেছে। 

নজরকাড়া মসজিদে প্রবেশ করতেই চোখ জুড়িয়ে যায় সবার। মসজিদের সৌন্দর্য বাড়াতে চারদিকে স্থাপন করা হয়েছে লাইটপোস্ট। নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। এ মসজিদটিতে রয়েছে ২২৬.৫ ফুট উচ্চতার বিশাল মিনার। দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ মিনার এটি। মসজিদ ও মিনারটির পুরোটাই সাদা টাইলস দিয়ে মোড়ানো। সুউচ্চ মিনার ছাড়াও মসজিদটিতে রয়েছে চারটি গম্বুজ। মসজিদের তিন পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সর্বোচ্চ এবং অন্যতম সুন্দর মিনার দেখে মুগ্ধ হন সবাই। মসজিদ অভ্যন্তরে রয়েছে নানা ধরনের উদ্ভিদের সুসজ্জিত বাগান। সেখানে মিলবে অর্কিড, বনসাই, সাইকাস, পাইনাসসহ নানা ধরনের শোভা বর্ধনকারী উদ্ভিদের দেখা। এ ছাড়া চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন জাতের সুপারি ও নারকেল গাছ। 

এই মসজিদের প্রধান আকর্ষণ হলো মসজিদের সামনে অবস্থিত শাহি গেট। এ ছাড়া এখানে রয়েছে আধুনিক শৌচাগার, অজুখানা, গোসলখানাসহ মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের সব রকম ব্যবস্থা।

খুলনার দারুল উলুম মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক ও মসজিদের খতিব মাওলানা মুশাররফ হুসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম মাদরাসা ও জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। মসজিদে জুমার দিন একতলা, দ্বিতলা, তিনতলা এবং সামনের মাঠও মুসল্লিতে ভরে যায়। প্রতি শুক্রবার এখানে ঈদের মতো একটা উৎসব হয়। মানুষ দূরদূরান্ত থেকে গাড়ি নিয়ে আসেন নামাজ পড়তে। এ ছাড়া যেকোনো সময় মুসল্লিরা প্রবেশ করতে পারেন। এমনকি মসজিদে রাতেও তালা দিয়ে রাখা হয় না, মানুষ যাতে ভালোভাবে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, মসজিদের সুউচ্চ মিনারটি ২৩ তলা সমান, ২২৬.৫ ফুট। ভারত থেকে মিস্ত্রি এবং মালামাল এনে মিনার ও প্রধান ফটক করা হয়েছে। গেটের গম্বুজ তৈরিতে বাংলাদেশের মিস্ত্রিরা সহযোগিতা করেছেন কিন্তু মূল মিস্ত্রি ছিল ভারতের। মসজিদের ভেতরে দামি কার্পেট ও অসংখ্য লাইট রয়েছে। এসব লাইট দেশের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর ও আমেরিকা থেকে আনা। 

মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মাদরাসা ও মসজিদের খুবই সুনাম রয়েছে। এই মাদরাসার ছাত্ররা সারাবিশ্বে রয়েছে। এখানকার লেখাপড়ার মান খুবই ভালো। সারা দেশের মধ্যে যেসব মাদরাসা ভালো রেজাল্ট করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য খুলনা দারুল উলুম মাদরাসা। 

তিনি আরও বলেন, মসজিদে শুক্রবার এবং রমজান মাসে তারাবির নামাজের জন্য মুসল্লিরা দূরদূরান্ত থেকে আসেন। শীতের সময় মুসল্লিদের যেন কষ্ট না হয় সেজন্য গরু, ছাগল, উটেরসহ বিভিন্ন চামড়ার কার্পেট রয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের ভেতরে গাছ-পালা দিয়ে সাজানো হয়েছে, যাতে মুসল্লিরা রুচিসম্মতভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন। 
এ ছাড়া লিচু গাছ, নারকেল গাছসহ বিভিন্ন গাছের শেকড় দিয়ে মুসল্লিদের জন্য চেয়ার বানানো হয়েছে। মসজিদের ফ্লোরে বসে যেসব মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন না, তারা এই চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করেন। মুসল্লি ছাড়াও মসজিদের সৌন্দর্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন।

এমজেইউ