সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইউপি সদস্যের হামলার শিকার তিন সাংবাদিক
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে টিসিবির পণ্য আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় তিন সাংবাদিক। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার তিন সাংবাদিক হলেন- মাইটিভির জীবননগর উপজেলা প্রতিনিধি মিঠুন মাহমুদ, দৈনিক খোলা কাগজের জীবননগর প্রতিনিধি মো. আজিজুর রহমান ডাবলু ও গ্রামের কাগজের জীবননগর প্রতিনিধি মো. তুহিনুজ্জামান তুহিন।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় মিঠুন মাহমুদ বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
হামলার শিকার হওয়া সাংবাদিকরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়। ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রশিদ ভুয়া নামে কার্ড তৈরি করে টিসিবির পণ্য আত্মসাৎ করেছেন বলে খবর পান সাংবাদিকরা।
বিকেলে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিক মিঠুন মাহমুদ, আজিজুর রহমান ডাবুল ও তুহিনুজ্জামান তুহিন। এ সময় ওই মেম্বারের বাড়ির রান্নাঘরে টিসিবির দুই বস্তা চাল ও বেশ কয়েক বোতল তেল পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ইউপি মেম্বার আব্দুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি গালাগালি শুরু করে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। পরে তার নেতৃত্বে তার ভাই তরিকুল ইসলাম তরি (৪৬), আব্দুর রশিদের ছেলে আমির হামজা অঙ্কন (২৫), মৃত মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে মো. হাসিবুর রহমান সুমনসহ (৩০) অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জন সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় সংবাদ সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত ক্যামেরা, মাইক্রোফোন বুম ও মোবাইল ভাঙচুর করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের রেকর্ড রয়েছে। গর্ভকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে ভুক্তভোগী অনেক নারীর কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে কার্ড বাণিজ্য করেছেন। তার কাছে নাগরিক সেবা নিতে গেলে তিনি টাকা দাবি করেন।
সাংবাদিক মিঠুন মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গোপনে খবর পাই মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও মৃত ফকির চাঁদের ছেলে আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন যাবত কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে অন্য মানুষের ভুয়া নাম ব্যবহার করে টিসিবির কার্ড তৈরি করে টিসিবির পণ্য আত্মসাৎ করছেন। তিনি সম্প্রতি বেশ কয়েকজনের টিসিবির পণ্য তুলে বাড়ি নিয়ে গেছেন। এমন সংবাদ পেয়ে আমরা তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়েছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আব্দুর রশিদের স্ত্রী স্বীকার করেন তার স্বামী টিসিবির পণ্য তুলে এনে রান্নাঘরে রেখেছেন।
আমরা রান্নাঘরে গিয়ে টিসিবির দুই বস্তা চাল আর বেশ কয়েক বোতল তেল দেখতে পাই। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগালি করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার নেতৃত্বে ৭-৮ জন আমাদের ওপর হামলা চালায়।
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিসিবির ডিলারদের কাছ থেকে অনেকজন তেল ও ডাল নিলেও চাল নেয়নি। আমি সেখান থেকে দুই বস্তা চাল কিনে এনেছিলাম এলাকার গরিব মানুষকে দেওয়ার জন্য। আমি বাইরে কাজে থাকায় চাল বিতরণ করতে দেরি হয়েছে। আমার বাড়িতে কোনো তেল ছিল না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নেওয়া হবে।
জীবননগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখব, যদি মামলা নেওয়ার মতো হয় তাহলে মামলা রেকর্ড করা হবে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে জীবননগর প্রেসক্লাবের সভাপতি এম আর বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়ে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, মোবাইল ভাঙচুর করেছে, লাঞ্ছিত করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। শুধু গ্রেপ্তার নয়, খুব দ্রুত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ঘটনায় প্রশাসনিকভাবে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
জীবননগর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি জাহিদ বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে সাংবাদিকের ওপর হামলা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আজ শুক্রবার জীবননগর সাংবাদিক সমিতির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আফজালুল হক/এমজেইউ