টাঙ্গাইলে মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের ইফতারে জোটে না ফলমূল। খেজুর থাকলেও তা খুবই সামান্য। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ইফতারে কাটছাঁট করেছেন শিক্ষার্থীরা। দুই-একজন শিক্ষার্থীর সামর্থ্য থাকলেও বাকি বন্ধুদের সঙ্গে একত্রে ইফতার করায় তারাও ফলমূল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদরের সন্তোষ ঘোষপাড়ায় অবস্থিত একটি মেসে গিয়ে দেখা গেছে, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ১৫ জন শিক্ষার্থী সন্তোষের ঘোষপাড়ার একটি বাসার দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। তারা প্রতিদিন সবাই একত্রে ইফতার করেন। 

ওই মেসের আমিরুল ও তানজিম ইফতার শুরুর ১৫ মিনিট আগে ফ্লরে চাদর বিছিয়েছেন। একে একে আনা হচ্ছে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, খেজুর, শরবত বানানোর চিনি ও ট্যাং পাউডার এবং সাগর কলা। মেস প্রধান জাহিদ পানিতে চিনি ও ট্যাং পাউডার ঢালছেন। এরপর বাকি শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করছেন। তাদের প্রতিদিনের ইফতারও এমনই হয়। তবে কোনো কোনো দিন জিলাপি এবং পেয়ারাও থাকে ইফতারে। সেটা নির্ভর করে টাকার ওপর। কিন্তু বাজারের হরেক রকমের ফল যেমন, কমলা, আপেল, আঙ্গুর, বেদেনাসহ আমদানিকৃত ফল কিনতে পারেন না তারা। কারণ প্রতি মাসের নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা খরচের বাইরেও রোজায় বেশি টাকা খরচ হয়। নির্দিষ্ট টাকার বাজেটে ফলমূলের তালিকা করাটা কষ্টসাধ্য। ইফতারের মেনুতে ফল না থাকায় ভাজাপোড়া খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

শুধু এই মেসেই নয়, শহরের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মেসেও একই অবস্থা। ইফতারের পরের খাবারের মেনুতেও নেই বড় মাছ, কিংবা মাংস। সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন ব্রয়লার মুরগি থাকে খাবার মেনুতে। 

এদিকে মেস ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি দাম বেড়েছে বিদ্যুতের। এতেও বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ফলে একজন শিক্ষার্থী টিউশনির টাকা এবং বাড়ি থেকে টাকা এনেও মেস খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আপেল-কমলা আঙ্গুরসহ আমদানিকৃত ফলমূল ছাড়াই ইফতার করতে হচ্ছে মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান শিক্ষার্থীরা।

মেস প্রধান জাহিদ বলেন, গ্রাম এলাকা হলেও এখানে বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেশি। শহরের পার্কের বাজারের চেয়ে প্রত্যেক পণ্য এখানে বেশি দামে কিনতে হয়। ইফতারে তেমন কিছুই থাকে না ভাজাপোড়া ছাড়া। সবরি কলার পরিবর্তে সাগর কলা কিনতে হয়। ফল হচ্ছে বিলাসী পণ্য। যা মেসের শিক্ষার্থীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বাজারে গেলে ফলের দিকে চোখ যায় কিন্তু কেনার সামর্থ্য নেই। ইফতারের প্রথমদিন কিছু কিছু ফল কিনতে পারলেও পরের দিনগুলো আর সম্ভব হয়নি।

মেসের শিক্ষার্থী আবির জানান, ইফতারে খেজুরের পরিমাণ থাকে কম। আগে যেখানে মাসে ৩ হাজার টাকা খরচ হতো বর্তমানে রোজার মাসে যেভাবে ইফতারসহ রাতে এবং সেহেরিতে খেতে হচ্ছে তাতে ৪ হাজার ৫০০ টাকা খরচ পড়বে। সেখানে যদি ফলমূল কেনা লাগতো তাহলে আরও জনপ্রতি ২ হাজার টাকা বাড়তি খরচ পড়তো। এতো টাকা পরিবার থেকে আনা সম্ভব না।

মাভাবিপ্রবির গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে বর্তমানে আগের মাসের থেকে সব কিছুর দাম ২০ থেকে ৫০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মানুষ ইফতারে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারছে না। মেসের শিক্ষার্থীরা আরও কষ্টে করে ইফতার করছে।

ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া আফরিন বলেন, বাজারে সব জিনিসের যে দাম, তাতে  নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা বিপাকে আছেন। বাড়ি থেকে বাড়তি টাকা এনেও খরচ চালাতে পারছেন না। পরিবারও কষ্টে আছে। কোনো জিনিসের দাম একবার বাড়লে তা আর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে দেখিনি কখনো।

ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শামীম বলেন, বর্তমানে বাজারে ঢুকলেই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের হাহাকার। যে খেজুর ১০০-১২০ টাকায় কেনা যেত সেই খেজুর এখন ৫০০ টাকা। আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর তো এখন আমাদের মতো মানুষের কাছে বিলাসিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশনি করে চলে। কিন্তু বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও, টিউশনির সম্মানি বাড়েনি। তাই ফলমূল খাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও কেনার সামর্থ্য নেই। দিন দিন স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছে মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা। 

অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর