‘আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না’
শামীম ইশতিয়াক ও তাওহীদুর রহমান। ময়মনসিংহ নগরীর কলেজ রোড রেলক্রসিং এলাকায় একটি মেসে থাকেন তারা। শামীম মাস্টার্স শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আর তাওহীদুর পড়ছেন অনার্স শেষ বর্ষে। দীর্ঘদিন ধরে মেসে থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা। তাদের সঙ্গে মেসে থাকেন আরও আটজন।
মেসের বাজার করতে শামীম-তাওহীদুরের গন্তব্য সানকিপাড়া বাজারে। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে বাজারে গিয়ে রীতিমতো দিশেহারা তারা। সেই সঙ্গে মেস ভাড়া ও অন্যান্য খরচও বেড়েছে অনেক। ফলে হিসেব কষে জীবন চালাতেই যেন হিমশিম অবস্থা তাদের, এতে খাবারের ব্যয়েও করতে হচ্ছে কাটছাঁট।
বিজ্ঞাপন
নগরীর রেস্টুরেন্টগুলোতে নানান মুখরোচক ইফতার সামগ্রী থাকলেও মেসে থাকা ছাত্রদের ভরসা মোড়ের দোকানে বিক্রি করা ইফতার সামগ্রী। সেখান থেকে ছোলা-মুড়ির সঙ্গে কিছু পেঁয়াজু, বেগুনি আর জিলাপি কিনে নিয়ে সবাই মিলে সেরে ফেলছেন ইফতার। সেহেরিতেও থাকে না দুই-একটি পদের বেশি খাবার।
একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশচুম্বী দাম, অন্যদিকে যাপিত জীবন নিয়ে রীতিমতো দিশেহারা মেসে থাকা এসব শিক্ষার্থী। যার প্রভাব পড়ছে পড়াশোনাতেও।
আনন্দমোহন কলেজের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন শামীম ইশতিয়াক। হতাশা ব্যক্ত করে এই যুবক বলেন, আমরা নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি। আগের তুলনায় বাসা ভাড়াও যেমন বেড়েছে, তেমনি অন্যান্য সব কিছুর দামই অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে টিউশনি কিংবা পার্টটাইম কাজ করেও আমাদের মতো বেকারদের জীবন চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও চাকরির আবেদন, ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দেওয়াসহ অতিরিক্ত অনেক খরচই আমাদের জন্য অনেক চাপ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন
নাসিরাবাদ কলেজের মার্কেটিং বিভাগে অনার্স শেষ বর্ষে পড়া শিক্ষার্থী তাওহীদুর রহমান বলেন, বাসা থেকে পাঁচ হাজার টাকা আনি। যে ছোট্ট রুমটিতে তিনজনে থাকি এটার ভাড়াই জনপ্রতি দুই হাজার করে ছয় হাজার টাকা। আরও আড়াই হাজার টাকা খাবারের জন্য জমা দেই। তাহলে থাকে আর কয় টাকা। এভাবে কি চলা আদৌ সম্ভব? কিছুদিন আগেও বাজার করলে দুই হাজারের মধ্যে হয়ে যেত। ওই জায়গাও ২৬০০-২৮০০ টাকা লাগে। তারপরও খাবারের মান থাকে জঘন্য। কোনো রকমে বেঁচে আছি। আমরা কতটা স্ট্রাগল করে টিকে আছি এটা বলে বুঝাতে পারব না। আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না।
আনন্দমোহন কলেজ থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা আরেক চাকরিপ্রত্যাশী নাঈম রেজুয়ান বলেন, আমি ৯ বছর ধরে মেসে আছি। শুরুতে যেখানে সিট ভাড়া দিতাম ১৩০০-১৪০০ টাকা সেখানে এখন ভাড়া দিতে হয় ২০০০ টাকা। সবশেষ জানুয়ারি মাসেও ২০০ টাকা বাড়িয়েছে। আর বাজারের যে অবস্থা বর্তমানে, বাজারে গিয়ে কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা কিনবো তা ভেবে পাই না। বাসা থেকে যে টাকা পয়সা আছে তাতে মাসের শুরুতে টাকা আসতে আসতেই টানাটানি শুরু হয়। আবার মাস শেষ হওয়ার আগেই দেখা যায় টাকা শেষ হয়ে গেছে। টাকার যোগান আমাদের বাড়েনি কিন্তু খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। টানাটানির মধ্য দিয়েই আমাদের জীবন চলছে।
উবায়দুল হক/আরএআর