পবিত্র মাহে রমজানে রংপুর মাহনগরীতে সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। কেজি প্রতি ১০০ টাকা কমে দেওয়া গরুর মাংস দুপুরের মধ্যেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ক্রেতারা সর্বনিম্ন ১০০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস কেনার সুযোগ পাওয়ায় নগরীতে বেশ সাড়া ফেলেছে এই উদ্যোগ।

রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের নাগালের মধ্যে মাংস বিক্রির এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিস্তা গ্রুপের মমিনুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাক নামে দুই ব্যক্তি। রমজান মাসজুড়ে চলবে গরুর মাংস বিক্রির এই কার্যক্রম।  

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে নগরীর কাচারি বাজার, কেরানীপাড়া চৌরাস্তা মোড়, লালকুঠি মোড়, জিলা স্কুল মোড়- এই চার স্থানে পিকআপ ভ্যানে করে মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়।  ‘হালাল মিট’ লেখা সম্বলিত পিকআপ ভ্যানটি নগরীর প্রেসক্লাব চত্বরসহ উল্লেখযোগ্য স্থানে ঘুরে ঘুরেও মাংস বিক্রি করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ‘হালাল মিট’ লেখা পিকআপ ভ্যানটির দুই দিকে খোলা। দুই অংশ দোকানের ঝাঁপের মতো রয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি গাড়ি। গাড়িতে একটি রেফ্রিজারেটরও আছে। গাড়ির ভেতরেই ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে গরুর মাংস। একজন মাংস কাটছেন, অন্যজন ব্যাগে ভরে দিচ্ছেন। সঠিক পরিমাপে মাংস বিক্রয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

সেখানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর প্রসেসিং ভুড়ি ৪৫০ টাকা, গরুর পা ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা,  গরুর মাথার মাংস ৫০০ টাকা, গরুর মাথার মগজ ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। রয়েছে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও। একজন ক্রেতা সর্বনিম্ন ১০০ গ্রাম মাংস কিনতে পারবেন। ‘হালাল মিট’ থেকে শুধু নিম্ন বা মধ্যবিত্ত পরিবারই নয়, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ গরুর মাংস কিনছে।

সামর্থ্য অনুযায়ী কয়েক টুকরা মাংস কিনতে পেরে খুশি অনেকেই। জাহিদুল ইসলাম নামে এক রিকশাচালক বলেন, আগের মতো আয়-রোজগার নেই। রমজানে চাইলেও অনেক কিছু কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। বাজারে গরুর মাংসের দাম অনেক বেশি। এক কেজির নিচে কেউ বেচতেও চায় না। খুব ভালো লাগছে এখানে ভ্যানে থাকা গরুর মাংস থেকে ২৫০ গ্রাম কিনেছি। গরিবের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ খুবই ভালো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী ক্রেতা বলেন, হামার মতো গরিবের জন্য ৫০-১০০ টাকাত গোশত পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার বাহে। বাজারোত গেইলে কায় হামাক এই টাকাত গোশত দিবে? আইজ মেলাদিন পর নিজের ইচ্ছামতো গোশত কিননু। আল্লাহ যদি বাঁচে থোয় কয়দিন পর ফির ১০০ টাকার গোশত কিনিম।

সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর মাংস বিক্রির এই উদ্যোগকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছে। সম্প্রতি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পিকআপ ভ্যানে মাংস বিক্রির কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান।

মাংস বিক্রি কার্যক্রমের উদ্যোক্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, একটি পিকআপ ভ্যানে একটি গরুর মাংসই থাকছে, তাও আবার দেশি জাতের। বাজার থেকে ১০০ টাকা কম দরে ৬৮০ টাকায় প্রতি কেজি মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। সর্বনিম্ন ১০০ গ্রাম পর্যন্ত বিক্রির কথা থাকলেও মানুষজনের আবদারে ৫০ টাকার মাংসও ওজন করে বিক্রি করা হচ্ছে। কাউকে বিমুখ করা হচ্ছে না।

আরেক উদ্যোক্তা মমিনুর ইসলাম বলেন, আমরা স্লোগান দিয়েছি ‘সাধ্য যতটুকু কিনতে পারবেন ততটুকু’। আমরা চাই সাধ্যের মধ্যে যাতে গরুর মাংস সবার কেনার সুযোগ হয়। এখন কয়েকটি পয়েন্টে এই কার্যক্রম চললেও রংপুর সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে পিকআপ ভ্যানে হালাল মিটের গরুর মাংস বিক্রয়ের চিন্তাভাবনা চলছে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর