ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। কেএসআরএম কোম্পানির ওই জাহাজে ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছেন। ওই জাহাজে জয় মাহমুদ নামে নাটোরের একজন কর্মরত রয়েছেন। অর্ডিনারি সিম্যান হিসেবে কাজ করেন তিনি। জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর জয় তার চাচাতো ভাই মারুফকে ক্ষুদে বার্তা পাঠান। ক্ষুদে বার্তায় জয় মাহমুদ লেখেন, ‘মোবাইল দিয়া দিলাম ভাই। ভালো থেকো, দোয়া কইরো। কাউকে বইলো না, আব্বু-আম্মুকে সান্ত্বনা দিও।’

বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সালাইনগর গ্রামে জয় মাহমুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন জয় মাহমুদের স্বজন ও এলাকাবাসী। ভিড় ঠেলে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ভেসে আসে কান্নার আওয়াজ। 

জয় মাহমুদের একমাত্র বড় বোন সালমা খাতুন। ছোট ভাইয়ের এমন বিপদের খবর শুনে শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছেন সালমা। কাঁদতে কাঁদতে সালমা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে মাকে কল দিতেই মা কান্না করে বলে জয়রে ডাকাতরা ধরছে। আমাদের সাথে ওর যোগাযোগ নাই। আমার পাঁচটা না একটা মাত্র ভাই, আমার ভাইরে ফিরে পেতে চাই। এইটা তো কাছে না। আমার আব্বার সামর্থ্য নাই ফিরিয়ে আনার। বাড়ির ভিটা ছাড়া আমার আব্বার কিছু নাই। বাপ-চাচা গায়ে খেটে টাকা জমায়ে ভাইকে চাকরি নিয়ে দিছে।

তিনি বলেন, আমাদের টাচ (স্মার্ট) ফোন নাই, তাই ভাইয়ের সঙ্গে সব সময় কথা বলতে পারি না। চিটাগাং থাকলে মাঝে মধ্যে কল দিয়ে কথা বলতো। দেশের বাহিরে গেলে তো নেটওয়ার্ক পায় না। ছুটিতে আসলে আমাদের বাড়িতে আসতো। ভাইয়ের সঙ্গে কি আর কথা হবি না, আমার ভাই কি আর আসবি?

মেয়ের কান্না দেখে জয় মাহমুদের মা আরিফা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গতকাল বিকেল ৪টায় শেষ কথা হয় জয়ের সঙ্গে। জয় আমাকে বলে মা আগামী ৩-৪ মাস আমার সাথে আর কথা হবি না। মোবাইলে এমবি থাকবে না তাই। আমার ছাওয়াল আমার কাছে লুকাইছে, আমি টেনশন করবো দেখে আমারে জানায়নি। আমি বলছি- বাবা তাহলে ভালো থেকো, এটাই আমার শেষ কথা।

তিনি বলেন, আমার সন্তানসহ আরও যারা জাহাজে আটকে আছে, তাদের যেন সরকার দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে।

জয় মাহমুদের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, ৪ মাস আগে ছেলে বাড়িতে এসেছিল। কাল রাতে তারাবির নামাজের পর জানতে পারি এ ঘটনা। আমার কিছু বলার ভাষা নেই। যত দ্রুত সম্ভব সরকার সবাইকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক।

জয় মাহমুদের চাচাতো ভাই মারুফ হোসন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়িতে অন্য কারো স্মার্ট ফোন না থাকায় আমার ফোন দিয়েই সব সময় ভাই কথাবার্তা বলতো। ভাই কালকে হঠাৎ করে বলে তার সাথে নাকি আর কথা হবে না। কেন হবে না জিজ্ঞেস করলে বলে যে, আমাদের জাহাজ জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে। তারা আমাদের জিম্মি করে রাখবে, তাই। এ কথা কাউকে বলার দরকার নেই। তারপর ৪টার দিকে আবার ফোন দিয়ে ভাই বলে মায়ের সঙ্গে কথা বলবে। ওইটাই শেষ কথা। 

পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মজিবর রহমান বলেন, রাত ৯টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জয় মাহমুদসহ এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পেরেছেন। এরপর থেকে জয়দের পরিবারসহ প্রতিবেশীদের মাঝে অন্যরকম ভয় কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই আটকা পড়াদের যেন সুস্থভাবে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন। 

গোলাম রাব্বানী/আরএআর